সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জাতীয় জরুরি সেবা

দ্রুত সচল করার উদ্যোগ নিতে হবে

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পতনের পর ভেঙে পড়েছে পুলিশের কার্যক্রম। বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হয় পুলিশ নিজেও। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে অনেক পুলিশ সদস্য নিহত হন, থানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। ফলে আতঙ্কের কারণে থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। এতে জাতীয় জরুরি সেবার কার্যক্রমও মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া এ সেবা থেকে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কার্যক্রম একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ নাগরিক দ্রুততম সেবা পেয়ে থাকেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত এই জরুরি সেবার সঙ্গে পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্য নিয়ে এ সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।

ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক যেকোনো অপরাধে কেউ আক্রান্ত হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে নিকটতম থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। অনেক থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ায় সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসও হাজির হয়। আন্দোলনে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত এ কার্যক্রম এখন অল্প কিছু লোকবল নিয়ে কোনোরকমে চলছে।

প্রথম আলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক দিনে ৯৯৯ নম্বরে যেসব কল এসেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ। অল্প কিছু ছিল পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা। এখন যাঁরা ৯৯৯ নম্বরে কল করছেন, তাঁদের বলা হচ্ছে, থানায় পুলিশ সদস্য নেই। এমনকি থানাগুলোয় পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার পর কল করেও যথেষ্ট সহায়তা পাওয়া যায়নি। সহযোগিতার জন্য কল করা ব্যক্তিদের সেনাবাহিনী থেকে সরবরাহ করা নম্বর দেওয়া হচ্ছে।

বনানী ও মহাখালীতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলঘর, রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ভবনে আগুন লাগানোর সময় ৯৯৯ নম্বরে কল করেও ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে কার্যক্রমটিকে এখন সচল করে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক নিয়োগের পর নতুন করে পুলিশের কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা এসেছে। পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকেও ধীরে ধীরে আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে থানাগুলোয় পুলিশ যাতে নিরাপদে অবস্থান করতে পারে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে, এ জন্য সবার সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, এর মধ্য দিয়ে দ্রুত জরুরি সেবাটি আবার চালু হবে এবং পুলিশ আবারও ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়াবে।