দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি আমরা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে এক দফা বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় তৈরি হয়। এরপর সরকারি–বেসরকারি নানা প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও বিরূপ প্রভাব ফেলে। আর যে যেভাবে পারছে, পাহাড়–টিলা কেটে বন–জঙ্গল সাফ করে ফেলছে, করছে বৃক্ষনিধন। সেসব গাছ বিক্রি করা হচ্ছে অবৈধ ও অননুমোদিত ইটভাটায়। আবার অনেক ইটভাটা তৈরিই হয়েছে বনাঞ্চলের ভেতরে। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের সর্বনাশ আরও বেশি ত্বরান্বিত হচ্ছে সেখানে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইটভাটার সংখ্যা ৮৫। এর মধ্যে ৩৩টি ইটভাটার অবস্থান সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে। আইন অনুযায়ী, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা করা যাবে না। ইট উৎপাদনের জন্য কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহারও নিষিদ্ধ। কিন্তু এসব নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডেই চলছে কক্সবাজার এলাকায় চার ভাগের তিন ভাগ ইটভাটা। ফলে একদিকে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বন উজাড়ের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্যও। কিন্তু আইনি জটিলতায় এসব ইটভাটা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
দেখা যাচ্ছে, ৫৪টি ইটভাটা বিভিন্ন গ্রামে তৈরি হলেও এসবের বিপরীতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই। ৬০টির বেশি ভাটায় ৭ থেকে ১৬ বছর ধরে অবৈধভাবে ইট উৎপাদন চললেও ঠেকানো যাচ্ছে না চকরিয়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে একটি মৌজায় ৩৬টি ইটভাটা চলছে। সংরক্ষতি বনে এক ইটভাটা মালিক স্বীকারই করলেন, ইটভাটার বিপরীতে লাইসেন্সের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে অবৈধ ১০টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৩৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভাটার চুল্লি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু ভাটার আগুন নিভিয়ে উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতার তুলনায় এমন অভিযান খুব একটা কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের সেখানে আরও শক্ত ভূমিকা থাকা দরকার। প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করে এভাবে দিনের পর দিন অবৈধভাবে ইটভাটা চলতে দেওয়ার মানে হয় না।
আর আইনি জটিলতা ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সঙ্গে সুরাহা করতে হবে। এটি যাতে কোনোভাবে অজুহাত হয়ে না দাঁড়ায়। অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদে জেলা–উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ কতটা আন্তরিক; সেটিই আমরা দেখতে চাই।