অহেতুক পদচারী-সেতু 

বাগেরহাটে অর্থ অপচয়ের প্রকল্প বন্ধ হোক 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ধাক্কা সামাল দিতে নানা ক্ষেত্রে আমরা সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতিফলন দেখতে পাই। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে সেই নীতি কতটা মানা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তর থেকে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেখানে কোনো কোনো প্রকল্পের আদৌ দরকার আছে কি না, তা ভাবা হচ্ছে না। আর এটিও সত্য, প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বহীন থাকে। বাগেরহাট শহরে দুটি পদচারী-সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এমন চিত্রই আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেখানে ছয় কোটি টাকার এ প্রকল্পকে ‘বিলাসী’ হিসেবে দেখছে মানুষ। তারা মনে করছে, এ পদচারী-সেতু দুটি তেমন কোনো কাজে আসবে না। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যানজট নিরসন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্য খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে পদচারী-সেতু দুটি নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতু দুটি নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে গেছে। এর জন্য কাটা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। কিন্তু এ দুই জায়গায় আদৌ পদচারী-সেতুর দরকার আছে কি না, তা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

এটি সত্য যে সেখানে সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী তোলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। মূল সড়কের ওপর পার্কিং, বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়, রাস্তা পারাপারেও নিয়ম মানা হয় না। তবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও ভালো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাই এ বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য যথেষ্ট। স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সুধী সমাজের ভাষ্য, এ পদচারী-সেতু কেউ ব্যবহার করবে বলে মনে হয় না। 

সওজ সূত্রে আরও যা জানা গেছে, তা গুরুতর। কয়েকজন কর্মকর্তার মতে, বাজেটের সময় শেষ, তাই জুনের মধ্যে অর্থ ব্যয় দেখাতে তড়িঘড়ি করে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সওজ বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্য, সেখানে প্রস্তাবিত চার লেনের সড়ক বাস্তবায়ন হলে পদচারী-সেতু ব্যবহার করতে মানুষ বাধ্য হবে। আবার সওজেরই সূত্র বলছে, চার লেনের সেই সড়ক হলে দুই লেনের জন্য করা পদচারী-সেতু কোনো কাজেই আসবে না। 

বলতেই হচ্ছে, অহেতুক এ পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যথেষ্ট সম্ভাব্যতা যাচাই না করে এমন প্রকল্প নেওয়ার কোনো মানে হয় না। অর্থ ব্যয় দেখানোর জন্যও জনগণের অর্থ অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই। অতএব অহেতুক এ পদচারী-সেতুর প্রকল্প বাতিল হোক এবং এর কাজ বন্ধ হোক।