সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

এখনই ইন্টারনেট খুলে দিন  

তথ্যের অবাধ প্রবাহই গুজব বন্ধ করবে 

কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যার পর থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। ফলে শনিবার (২০ জুলাই ২০২৪) প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত এ সম্পাদকীয় এখন অনলাইনে প্রকাশ করা হলো।

ছাত্র আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানোর অজুহাতে গত তিন দিন বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটানো হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ রকম সময়ে ইন্টারনেট না থাকা মানে হলো চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা ও অসুবিধার মধ্যে থাকা। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না।

প্রথমে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর–জি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর মোবাইল ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়েছে। এভাবে ইন্টারনেটের সব ধরনের সেবা বন্ধ করার যৌক্তিকতা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

ইন্টারনেট সেবা এখন দেশের সব ধরনের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান অনুষঙ্গ। ফ্রিল্যান্স্যারসহ লাখ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর রুটি-রুজি ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ রকম অবস্থায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে তা সরাসরি মানুষের জীবন–জীবিকার ওপর আঘাত করে।

সরকারি মহল থেকে কয়েক দিন ধরে বারবার বলা হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে; গুজবে কান দেবেন না। কিন্তু গুজবে কান না দিয়ে আসলে ঘটনা কী ঘটেছে, তা যাচাই করার মোক্ষম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। মনে রাখতে হবে, গুজব বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ। তাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে গুজব বাড়বে বৈ কমবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা অপতথ্য ছড়ায়—এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই অজুহাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়াটা তো মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার শামিল। সবচেয়ে বড় কথা, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির ঘোষণা দিয়ে এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলে সেটা হবে চূড়ান্ত স্ববিরোধী কাজ।

কয়েক বছর ধরে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো নানা রকম বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ করছে। এ অবস্থার মধ্যেও অন্তত কিছু নিউজ পোর্টালের দেওয়া তথ্যের ওপর মানুষ ভরসা করে। যেকোনো খবরের সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে ওই সব ওয়েবসাইট মানুষ দেখতে পারত। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় কোথায় কী ঘটছে, তা সঙ্গে সঙ্গে জানার কোনো উপায় নেই।

তিন দিন ধরে সারা দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে পাঠকদের তথ্য জানানো সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সেটা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে শুধু গুজব নয়, অপতথ্য ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আমরা গুজব চাই না। গুজবে কান দিতে চাই না। আমরা প্রকৃত তথ্য ও সত্য জানতে চাই। বিলম্ব না করে এখনই ইন্টারনেট খুলে দিন।