সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বড় কাটরায় আঘাত

জড়িতকে আইনের আওতায় আনা হোক

রাজধানীর পুরান ঢাকায় মোগল ও ব্রিটিশ আমলের অনেক পুরাকীর্তি আছে। সেগুলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। ইতিহাসবিস্মৃত জাতি হিসেবে আমরা সেসব স্থাপনা যথাযথ রক্ষা করতে পারিনি। অযত্ন-অবহেলায় যা টিকে আছে, সেগুলোর ওপরও বারবার আসছে আঘাত। পুরান ঢাকার বড় কাটরার কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি এ পুরাকীর্তির একাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় দেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এ সময় অনেক জায়গায় জবরদখলের ঘটনা ঘটে। বাদ যায়নি অনেক পুরোনো স্থাপনাও। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটার শেষ চিহ্নটুকু ধ্বংস করে ফেলা হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটাবাড়ি। একইভাবে দেশের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি পুরান ঢাকার ‘বড় কাটরা’র একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়। আগে থেকেই এসব স্থাপনার ওপর নজর ছিল স্থানীয় দখলবাজদের।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বড় কাটরার মূল অংশের ভেতরে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি বাড়ি ছিল। ২০২২ সালে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল। তখন বড় কাটরার অংশটিও কিছুটা ভাঙা পড়ে। তবে প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বাড়ির মালিক। এরপর জায়গাটি সিলগালা করে দেয় সরকার। সিলগালা থাকা সত্ত্বেও গত আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়িটি আবার ভাঙার কাজ শুরু হয়। পুরোপুরি ভাঙা শেষ হয় ২৮ আগস্ট। রাজউকের পক্ষ থেকে এটি ‘আদালতের আদেশ অমান্য’ বলা হচ্ছে। এ ঘটনায় অভিযোগ জানিয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তবে বাড়ির মালিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, কোনো অনিয়ম হয়নি।

ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়িটি ছিল বড় কাটরার দেয়ালের সঙ্গে। ওই দেয়ালের প্রায় ৩ শতাংশ জায়গা এবার নিশ্চিহ্ন করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেয়ালের এ অংশে ছিল মোগল আমলে বানানো তিনটি ঘর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান বলেন, পুরান ঢাকার ২ হাজার ২০০ স্থাপনার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে—এসব স্থাপনার দেয়াল ভাঙা, সংস্কার, মেরামত করা যাবে না। এর মধ্যে বড় কাটরার ভেতরে নির্মাণ করা ওই বাড়িও ছিল।

এ বিষয়ে ভবনের মালিক মো. আলী হোসেনের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কয়েক দফায় চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে। কিন্তু এবার তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়িসহ মোগল আমলের স্থাপত্যের ওই অংশটুকু ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।

আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই। বড় কাটরার অংশবিশেষ ভাঙার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা আশা করব, দেশের অন্যান্য পুরাকীর্তির সুরক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হবে।