সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

স্কুলে দুধপান কর্মসূচি

অবিলম্বে শিশুদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করুন

বিনা মূল্যে দুধ পান করানোর পাইলট কর্মসূচি (স্কুল মিল্ক ফিডিং) আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু প্রথম আলোর খবর বলছে, চুয়াডাঙ্গায় এই কর্মসূচি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। চারটি স্কুলের তিনটিতে শুরুই হয়নি, একটিতে কর্মসূচি চালুর পরপরই দুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসূচিটি নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রথম আলোর খবর বলছে, এই কর্মসূচি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কালুপোল, জীবননগরের শিংনগর, দামুড়হুদার কালিয়াবকরি ও আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একনাগাড়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরু করা গেছে শুধু কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

কিন্তু দুধ সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় পরিবেশক ১৭ দিনের মাথায় তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর। কারণ, স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচির কারণে দরিদ্র পরিবারগুলো সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই কর্মসূচি নিয়ে যেসব কাগজপত্র আছে, তাতে দেখা যায়, উন্নত বিশ্বে মানুষ দৈনিক প্রায় এক লিটার দুধ পান করে। বাংলাদেশে এই হার মাত্র ১৭৬ মিলিলিটার। স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রাণিজ পুষ্টির জোগানসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বড়-ছোট খামারিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া ছিল এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। স্কুলে দুধের মান ও সরবরাহ নিশ্চিতে স্থানীয় পর্যায়ে সাত সদস্যের একটি কমিটিও আছে। এই কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

চুয়াডাঙ্গায় বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন হয়েছিল। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দার ৩১ জুলাই আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তবে ১৭ দিন পর দুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল কেন, সে সম্পর্কে কথা বলার জন্য আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজনীন বানু নিজেই বলেছেন, তাঁকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। কবে নাগাদ এই কর্মসূচি চালু হবে বলা যাচ্ছে না। স্থানীয় পরিবেশক দাবি করেছেন, টাকাপয়সা সময়মতো পরিশোধ না করায় কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও মাগুরা জেলায় দুধ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ অপুষ্টির কারণে কৃশকায় ও খর্বাকৃতির শিশুর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। পুষ্টির সঙ্গে মেধার সম্পর্ক সরাসরি। বাজারে মাছ-মাংস বহু আগেই দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ডিম ছিল আমিষের উৎস। তা–ও এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দুধের দাম বছর দেড়েকের মাথায় সত্তরের কোঠা থেকে ১০০ ছুঁয়েছে। মৌলিক চাহিদার এক নম্বরে থাকা খাদ্য জোটাতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় দেশের ভবিষ্যৎ যে শিশুরা, তাদের জন্য এক পোয়া দুধের দায়িত্ব নিয়েও যদি কর্তৃপক্ষ পিঠটান দেয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। অবিলম্বে শিশুদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করা হোক।