ঘুষ–চাঁদাবাজি বন্ধ করতে উদ্যোগী হোন

সাধারণ মানুষের যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তা হচ্ছে সরকারি অফিস মানেই হচ্ছে ঘুষ বা অবৈধ লেনদেনের কারবারের জায়গা। সরকারি কর্মকর্তা মানে হচ্ছে জনগণের সেবক, এমন বিষয়টিই আমরা জেনে আসছি। কিন্তু তাঁরা আসলে কতটা জনগণের সেবক, তা নিয়ে জনগণের মনেই সব সময় সন্দেহ কাজ করে। আর সংবাদমাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত খবরাখবর থেকেই আমরা বুঝতে পারি বাস্তবতা আসলে কী বলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েও বিগত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বরং কোনো কোনো জায়গায় ছাড় দিয়ে দুর্নীতিকে আরও প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি পারবে সরকারি অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত করতে?

ঘুষ, চাঁদাবাজি বা অবৈধ লেনদেনের সব সময় বড় অভিযোগ ওঠে তহশিল অফিস ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোকে কেন্দ্র করে। উপজেলার তহশিল অফিসগুলোতে ভূমির খাজনা ও ভূমি নামজারিসহ এ–সংক্রান্ত অন্য কাজগুলো হয়ে থাকে। অন্যদিকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে জমির দলিলসহ সরকারি যেকোনো দলিল বা চুক্তিপত্র নিবন্ধন করা হয়। সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় উৎস এসব অফিস। কিন্তু অভিযোগ আছে, যত রাজস্ব এসব অফিস থেকে আদায় করা হয়, তার চেয়ে বহুগুণ অর্থ এখানে অবৈধভাবে লেনদেন হয়। এ নিয়ে সব সময় সংবাদমাধ্যমগুলো সরব থেকেছে। এরপরও দেশজুড়ে তহশিল ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে দুর্নীতির দৌরাত্ম্য কমেনি। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দিন শেষে পরিস্থিতি আগের জায়গায় গিয়েই ঠেকে।

প্রথম আলোর কাছে একজন পাঠক অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকায় তহশিল অফিসে গিয়ে তিনি চরমভাবে ভুক্তভোগী হয়েছেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে জমিসংক্রান্ত বিষয়গুলো তিনি দেখেন। তিনি স্বীকার করেন, প্রতিবারই জমিসংক্রান্ত কাজে তাঁকে ঘুষ দিতে হয়। তবে সরকার পতনের পর এটি দু–তিন গুণ বেড়ে গেছে। তাঁর কাছে আগে যেখানে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা ছিল, সেখানে নেওয়া হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। এই একটি অভিযোগ থেকে স্পষ্ট হয়, ঘুষ–বাণিজ্য এখনো কতটা ভয়াবহভাবে বিরাজ করছে এসব অফিসে। 

রাজশাহীর বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ছিল। একটা সময়ে আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্যের প্রভাবে সেই চাঁদাবাজি চলত। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা খুন হলেও বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সেই চাঁদাবাজি এখন চলে গেছে বিএনপি নেতাদের দখলে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তহশিল ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সব ধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তাকে যথাযথ জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।