সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লি

ক্ষুদ্র শিল্পে ইটিপির ব্যবহার আশাব্যঞ্জক

দেশে শিল্প-কলকারখানার প্রসারের মধ্য দিয়ে বেড়েছে পরিবেশদূষণের মাত্রাও। শিল্প-কলকারখানার কারণে একদিকে কমছে কৃষিজমি, পাহাড় বা বনাঞ্চল; আবার অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে নদী-খাল-বিল। কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে বাইরে ফেলার নিয়ম থাকলেও তা না মানার রেওয়াজই যেন তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বা পরিশোধনাগার তৈরি ও নিয়মিত চালু রাখার খরচ বাঁচাতে গিয়ে করা হচ্ছে পরিবেশের অনির্ণনেয় ক্ষতি। তবে সিরাজগঞ্জে তাঁতপল্লিতে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে ও নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপও। বিষয়টি বেশ আশাব্যঞ্জক। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, সিরাজগঞ্জ হচ্ছে দেশে তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের অন্যতম জেলা। দেশের মোট তাঁতের সাড়ে ৮ শতাংশ রয়েছে সেখানে। জেলার ৯টি উপজেলার ২২৫টি তাঁত কারখানায় তাঁত রয়েছে ৯ হাজার ৭৬৫টি আর ডাইং কারখানা আছে প্রায় তিন শ। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এসব কারখানার মালিকেরা পরিবেশ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। ফলে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনে আগ্রহও দেখা যায় না তাঁদের মধ্যে। ইটিপির নির্মাণ ব্যয় বেশি বলে এখানে যুক্তি দেখানো হয়।

এমন পরিস্থিতি সুতা ডাইং বা রং করার প্রক্রিয়ায় দূষিত বর্জ্য চলে যাচ্ছে পুকুরে-নদী-খালে। এভাবেই চলছে কয়েক দশক ধরে। ডাইং কারখানাগুলো হওয়ার পর দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তবে কারখানামালিকদের অনেকে এখন ইটিপি স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছেন। দুই দশক ধরে কারখানা চালিয়ে আসা মালিকও এখন বসাচ্ছেন ইটিপি। ফলে সেখানে দূষণ কমে এসেছে। এটি সম্ভব হচ্ছে মূলত তাঁদের মধ্যে পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা বেড়েছে। আরও অনেকে পরিবেশসম্মত ইটিপি স্থাপনে উদ্যোগ নিচ্ছেন।

বিশ্বব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) একটি প্রকল্পের বাস্তবায়নে এমন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের তাঁত এলাকাগুলোতে। পিকেএসএফের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তাঁত-অধ্যুষিত এলাকায় শব্দ, মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ একটি সাধারণ ঘটনা। তাঁরা জানান, জেলার তামাই ও বেলকুচি এলাকার কারখানাগুলো থেকে দৈনিক গড়ে এক হাজার লিটার তরল বর্জ্য উৎপাদন হয়, যা কোনোরকম শোধন ছাড়াই আশপাশের জলাশয়ে পড়ছে। এই একটি উদাহরণ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দেশে শিল্পকারখানার বর্জ্যে পরিবেশদূষণের ভয়াবহতা।

আমরা আশা করব, সিরাজগঞ্জের সব কারখানার মালিকেরা পরিবেশসচেতন হয়ে উঠবেন এবং পরিবেশবান্ধব ইটিপি স্থাপন করবেন। তবে এখানে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ইটিপি স্থাপনের পর অনেকে সেটি নিয়মিত চালু রাখেন না, সিরাজগঞ্জে এমনটি হোক আমরা চাই না। আমরা আশা করব, সিরাজগঞ্জের শিল্পোদ্যোক্তারা এ ব্যাপারে দেশের অন্যান্য শিল্প অঞ্চলের জন্য অনুসরণীয় হয়ে উঠবেন।