সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা

বিপন্ন মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ান

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে আটটি জেলায় ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মারা গেছেন দুজন। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ২৯ লাখের বেশি। ফেনী শহর পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। সেখানে লাইন তলিয়ে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোনো কোনো অংশে পানি ওঠায় গাড়ি চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার পর্যন্ত ১০ জেলায় জনজীবন বিপন্ন, পর্যুদস্ত।

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার তথ্য অনুযায়ী, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

প্রথম আলোর সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক রাস্তা, বাঁধ ও সেতুর অংশ। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিলেও কেউ কেউ আটকা পড়েছেন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের (৪১ বর্গকিলোমিটার) ‘স্ন্যাপ গেট’–এর তিনটির মধ্যে একটি খুলে দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়। পানির অস্বাভাবিক চাপ থাকলে এই গেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে ভাটির দেশকে জানাতে হয়, যাতে তারা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ভারত গেট খুলে দেওয়ার আগে বাংলাদেশকে জানায়নি বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। এটা আন্তর্জাতিক রীতির বরখেলাপ। ভারতের এই ভূমিকা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।

তবে উজান থেকে আসা পানির ঢলই বন্যার একমাত্র কারণ নয়। আমরা দেশের ভেতরে যেভাবে নদী, খাল ও জলাশয় ভরাট করে ফেলেছি, তাতে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে। আর এবার তো রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে।

এ মুহূর্তে বন্যাদুর্গত মানুষগুলোকে বাঁচানো প্রধান কর্তব্য বলে মনে করি। বিশেষ করে যাঁরা পানিবন্দী হয়ে আছেন, তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে, তাঁদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বোট সরবরাহের দাবিতে। যাঁর যাঁর জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। কেবল বোট নয়, বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য, খাবার পানি ওষুধ পাঠাতে হবে।

আশার কথা, এবার তাঁদের সহায়তা করতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন। অনেক বোট সরবরাহ করেছেন। খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দিতে বন্যাদুর্গত এলাকায় চলে গেছেন। তঁারা প্রমাণ করেছেন মানুষ মানুষের জন্য। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন। পানি সরে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ বিষয়েও স্বাস্থ্য দপ্তরকে সজাগ থাকতে হবে।

এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন। বিপন্ন মানুষের কষ্ট ও যন্ত্রণা আমরা উপলব্ধি করতে পারব না। কিন্তু পাশে দাঁড়ালে, সহায়তার হাত বাড়ালে তাঁদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার ভাষায় বলি: মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।