সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ঠিকাদার ও তদারক কর্মকর্তার শাস্তি নয় কেন

দেশের উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণের বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়ে আসছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এতে দেশে যোগাযোগব্যবস্থায় নিঃসন্দেহে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।

কিন্তু অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় অজস্র অবকাঠামোও নির্মাণ হতে দেখছি, যাতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট দু-একজন লাভবান হলেও আখেরে জনসাধারণের করের অর্থই গচ্চা যাচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমের বরাতে প্রায়ই অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে সেতুর ক্ষেত্রে এ প্রবণতা আকছার দেখা যায়। কোথাও কোনো সড়কের নামগন্ধ নেই, অথচ ধানখেতের মধ্যে শোভা পাচ্ছে সেতু। পটুয়াখালীর বাউফলে এমনই একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দিয়ে কখনো কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। সেতুটি থেকে সবচেয়ে কাছের পাকা সড়কটি দেড় কিলোমিটার দূরে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা ও ভরিপাশা গ্রামের মধ্যবর্তী খালের ওপর সাত বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। অথচ এর দুই পাশে যানবাহন চলাচলের জন্য আগে থেকে কোনো রাস্তা ছিল না। বর্তমানে সেতুটির উত্তর পাশে কাঁচা রাস্তা রয়েছে, যা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। সেতুর দক্ষিণ পাশ পুরোপুরি ফাঁকা, প্রাকৃতিক বনজঙ্গলে ভরা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে ৩৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত এই সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সেতু নির্মাণের পর সাত বছরেও সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। এর ফলে সেতুটি যেন ফাঁকা জায়গায় একরকম একাকী দাঁড়িয়ে আছে। এতে এই সেতু কারও কোনো উপকারে আসছে না। অথচ সেতুটির বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে, রড বেরিয়ে রয়েছে।

এ রকম একটি সেতু নির্মাণের পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। এলাকাবাসী মনে করেন, এটি অপচয় ও পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শন করে মানুষের যাতায়াতের উপযোগী সড়ক নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হবে।

আমরা মনে করি, সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নেওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে, না হলে জনগণের করের অর্থ নতুন করে পানিতে ঢালা হবে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার এই কাণ্ড যাঁরা করেছেন, তাঁরা কেন জবাবদিহির আওতায় আসবেন না?

যথাযথ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও তদারক কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।