সেচের পানি

বরেন্দ্র অঞ্চলে বৈষম্য দূর করুন অবিলম্বে

সেচের পানি নিয়ে অনিয়মের জেরে দুই বছর আগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর দুজন কৃষক আত্মহত্যা করেন। সে ঘটনায় পানি সরবরাহে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একজন গভীর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি এখন জামিনে আছেন, মামলাও বিচারাধীন। ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ আলোড়ন তুললেও গোদাগাড়ীতে সেচের পানি নিয়ে বৈষম্য এখনো ঘোচেনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। 

২০২২ সালের মার্চ মাসের দুই কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় বেরিয়ে আসে পানি সরবরাহে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি। কৃষকেরা নানা সময়ে প্রতিবাদ করে এলেও কোনো কাজ হয়নি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে দুই কৃষক আত্মহননের পথ বেছে নেন। সেই ঘটনায় পুলিশের অভিযোগপত্রেও উল্লেখ করা হয়, সেচের পানি না পাওয়ার কারণেই এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

গত বৃহস্পতিবার বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপের সেচের পানি বিতরণে অনিয়ম বন্ধে রাজশাহীতে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি নামে কৃষকদের একটি সংগঠন। অনিয়ম বন্ধ ছাড়াও খাল ও জলাশয় সংস্কার এবং সেচকাজে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফার দাবি জানান তাঁরা। এ কথা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই যে কৃষি কেন কৃষকদের বাঁচার অবলম্বন। তবে নানা দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ও সুবিধাবঞ্চিত এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য কৃষি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিই তাঁদের প্রধান পেশা ও জীবিকার প্রধান উৎস।

গোদাগাড়ীর ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১০ বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের সমন্বয় কমিটি। সংগঠনটির সভাপতি সরল এক্কা প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সেচের পানির অনিয়ম নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় সোচ্চার হয়েছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বর্তমানে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছে। তবে সেচের পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর দিন দিন আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে খরার সঙ্গেও মোকাবিলা করতে হয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষসহ সব কৃষককে। সেখানে কৃষকদের আশ্বস্ত করতে সেচের পানি সরবরাহ করা হলেও বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে।

সব নাগরিককে সমান চোখে না দেখার কারণে এ বৈষম্য থেকে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।