খুলনার সুন্দরবন থেকে গাজীপুরের শালবন বা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের বনাঞ্চল—প্রকৃতি ও পরিবেশের লীলাভূমিগুলো কোনোটাই ভালো নেই। সেই সঙ্গে ভালো নেই সেখানকার জীববৈচিত্র্যও।
দিন দিন বনাঞ্চলের পরিমাণ কমছে। এই সবুজ প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা এবং তদারকে সরকারি একাধিক কর্তৃপক্ষ থাকলেও তাদের তৎপরতা নিয়ে কতটা আস্থা রাখা যায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফলে গাজীপুরের শ্রীপুরের ভাওয়াল বনাঞ্চলে শালবনে প্রায় দিনই আগুন লাগার দৃশ্য আমরা দেখতে পাই। সর্বশেষ এ মাসের শুরুতে উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের পটকা এলাকায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, শালবনের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিয়াল, গুইসাপ, পাখিরা সহজে পালিয়ে যেতে পারলেও অনেক প্রাণী বেঘোরে মারা পড়ে। আগুনের তীব্রতা শালবনের ভেতরে বিভিন্ন কীটপতঙ্গের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণে শালগাছের ছোট ছোট চারা মারা যায়।
এতে নতুন করে শালগাছের জন্ম ব্যাহত হয়। এই বনাঞ্চল দেশীয় সব ধরনের পাখির অভয়ারণ্য ছিল। মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে বন্য প্রাণী ও পাখির অনেক প্রজাতিই বিলীন হয়ে গেছে। গুটিকয় টিকে আছে সংকটাপন্ন অবস্থায়।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে শ্রীপুর সদর, শিমলাপাড়া, সিংড়াতলী, সাতখামাইর, কাওরাইদ, গোসিংগা ও রাথুরা বিটের আওতাভুক্ত মোট বনভূমি ২৪ হাজার ২৭১ একর। কমবেশি সব এলাকাতেই আগুন দেখা যায় বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন।
একটা বনকে নিমেষেই ধ্বংস করতে অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে ভয়াবহ আর কী হতে পারে। ফলে সহজেই বনের জায়গা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং সেই জায়গা দখল করে নিতেও সুবিধা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যেও বিষয়টি প্রচলিত যে বন ধ্বংস করে বনভূমি দখল করার উদ্দেশ্যেই কিছু দুষ্কৃতকারী অগ্নিসংযোগ করে।
বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, বনভূমি দখল করার জন্য আগুন দিয়ে বন ধ্বংস করা হয়। পাশাপাশি ডালাপালা ও জমিতে ব্যবহারের জন্য ছাই সংগ্রহের জন্য এ আগুন দেওয়া হয়।
বনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেলে ফায়ার লাইন কেটে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তবে বিশাল বনের তুলনায় বনকর্মীর সংখ্যা কম হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের বেগ পেতে হয়। দুঃখজনক হচ্ছে, সরকারি যেকোনো কর্তৃপক্ষের কাছেই জনবলসংকটের কথাই আমাদের শুনতে হয়।
এভাবে চললে তো শ্রীপুর রেঞ্জের বনাঞ্চল হারিয়ে যেতে বেশি দিন লাগবে না। বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্মিলিতভাবে তৎপর হওয়া জরুরি। দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক, সেটিই আমরা দেখতে চাই।