সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কামান না দেগে স্থানীয়দের যুক্ত করুন

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২১০–এ পৌঁছানোতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের টনক কতটা নড়েছে জানি না, তবে দেশবাসী এ খবরে খুবই বিচলিত। ডেঙ্গুতে গত বছর ১ হাজার ৭০৫ জন মারা গেছেন। এবারের সংখ্যা অনেক কম। এ নিয়ে সরকারের আত্মতুষ্টি লাভের সুযোগ নেই। প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক ও অপূরণীয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি মাসের ১২ দিনে ডেঙ্গুতে ৪৭ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি বছর মৃত্যু হলো মোট ২১০ জনের। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৯০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার।

সিটি করপোরেশনভিত্তিক হিসাবে এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। যে সিটি করপোরেশনের মেয়র দুপুরের ভাত আনার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করেন সরকারি কোষাগার থেকে, সেই সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে উত্তর সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু দমনে সাফল্য দেখিয়েছে, তার প্রমাণ নেই। বিগত সরকারের আমলে ব্যতিক্রম বাদে স্থানীয় সরকার সংস্থার প্রায় সব জনপ্রতিনিধি জনসেবার চেয়ে আত্মসেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

হাসপাতাল ও সিটি করপোরেশন সূত্রে পাওয়া খবর দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুতে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, সে তথ্য পাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না সচেতনতার অভাবে। আবার অনেকের সামর্থ্যই নেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার। এসব ক্ষেত্রে কেউ মারা গেলে হিসাবের বাইরেই থেকে যান।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রথম ও প্রধান কাজ হলো এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা। বাড়ির কাছাকাছি কোথাও এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পানি জমতে দেওয়া যাবে না। এসি, ফুলের টব, ফ্রিজের নিচসহ বাসায় যেসব স্থানে পানি জমে থাকতে পারে, সেগুলো থেকে নিয়মিত পানি সরিয়ে ফেলতে হবে। পানি জমে থাকতে পারে, এমন জিনিস, যথা বালতি, খালি বোতল, মগ, পাতিল—এগুলো উল্টে রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশ ও বারান্দা-করিডর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, প্রয়োজনে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো গেলে মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

মশা মারার কাজ করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার। কিন্তু এ মুহূর্তে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোয় নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসক দিয়ে এসব সংস্থা পরিচালনা করছে, যাদের পক্ষে মশকনিধনসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ক্ষমতার পালাবদলের আগেই ঢাকার দুই মেয়র পলাতক। কাউন্সিলররাও নিষ্ক্রিয়। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরখাস্ত করার পর এসব প্রতিষ্ঠান অনেকটাই অথর্ব। এ অবস্থায় সরকার স্থানীয় তরুণদের যুক্ত করে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে পারে, যাতে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে।

ভারতের কলকাতা নগরীতে একসময় ডেঙ্গুর ব্যাপব প্রাদুর্ভাব ছিল। সেই কলকাতা এখন অনেকটাই ডেঙ্গুমুক্ত। সেখানকার সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা ডেঙ্গুবিরোধী কার্যক্রমে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের এখানে পূর্বাপর সরকার সেদিকে নজর দেননি। ডেঙ্গু নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, অনেক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সফল না হওয়ার পেছনে কারণটা খুঁজে বের করা দরকার। মশা মারতে কামান না দেগে স্থানীয়দের যুক্ত করুন।