উত্তরায় হাতির মৃত্যু

বন বিভাগকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হোক

বন্য প্রাণীর জন্য বাংলাদেশ দিন দিন বিপৎসংকুল হয়ে পড়ছে। সেটি গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিতেই ভালোমতো টের পাওয়া যায়। হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্বের ফলে মানুষের মৃত্যুও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিষয়ে সর্বদা বন্য হাতির দিকে আমাদের মনোযোগ থাকলেও পোষা হাতি নিয়ে সেভাবে আলোচনা শোনা যায় না। গত বুধবার রাজধানীর উত্তরার কোর্টবাড়ী লেভেল ক্রসিং এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় একটি পোষা হাতির মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় সচেতন মহলে বেশ সমালোচনা তৈরি হয়েছে। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বুধবার দুপুরে দুই তরুণ দুটি হাতি নিয়ে আবদুল্লাহপুর মোড় থেকে দক্ষিণখানের ফায়দাবাদের দিকে যাচ্ছিলেন। কোর্টবাড়ী লেভেল ক্রসিং এলাকায় ট্রেনের হুইসেলের শব্দে ভয় পেয়ে যায় হাতি দুটি। ছোট হাতিটি ভয়ে রেললাইনের ওপর উঠে দৌড়াতে থাকে এবং একপর্যায়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে সেটি গুরুতর আহত হয়। হাতি আটকে যাওয়ায় ট্রেনও থেমে যেতে বাধ্য হয়।

আহত হওয়ার এক ঘণ্টা পর্যন্ত হাতিটি বেঁচে ছিল। এ সময় তার করুণ মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না স্থানীয় লোকজনের। পরে ক্রেনের মাধ্যমে হাতিটি সরালে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

এখন প্রশ্ন ওঠে, এই হাতি ওই তরুণদের কাছে কীভাবে এল? কেউ চাইলেই কি হাতি পোষ্য নিতে পারে? আমরা জানতে পেরেছি, সার্কাসে খেলা দেখানোর জন্য কিছু হাতি পোষ্য হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে। এর জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। চিড়িয়াখানার অতিরিক্ত হাতি থেকে সেগুলো দেওয়া হয়। সার্কাসের নামে ৩০-৩৫টি হাতির অনুমোদন আছে। কিন্তু সার্কাসের সেই ঐতিহ্য বা রমরমা অবস্থা নেই। ফলে সেসব হাতি নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজিই চলে মূলত। সার্কাসের নামে অনুমোদনকৃত ছাড়াও দেশজুড়ে নানাভাবে পোষ্য নেওয়া হাতি নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজি চলে। হাতির মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে মূলত এসব কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এ নিয়ে প্রায় সময় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুসারে হাতি নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করার কোনো সুযোগ নেই, চাঁদাবাজি তো নয়-ই। এটি হাতির প্রতি অমানবিক আচরণও। 

এখন যেহেতু সার্কাস প্রদর্শনী নিয়মিত হয় না এবং হাতিও বিপন্ন প্রাণী, ফলে হাতিকে পোষ্য হিসেবে সুযোগ থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি না। বন্য হাতির বাইরে থাকা হাতিগুলোর দায়িত্বও বন বিভাগকে দেওয়া হোক। এখানে স্থানীয় প্রশাসনেরও করণীয় আছে। ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজির জন্য ব্যবহৃত হাতিগুলোকে অতিসত্বর জব্দ করা হোক। সেগুলোকে সাফারি পার্ক বা নিরাপদ আবাসস্থলে রাখাই যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমরা মনে করি।