সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় দুই নির্মাণশ্রমিককে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের নাম এসেছে। মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার অজুহাতে এই হত্যাকাণ্ড হলেও এর পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরের প্রতিমার কাপড়ে আগুন লাগার সময় পাশের বিদ্যালয়ে নির্মাণকাজে নিয়োজিত ছিলেন শ্রমিকেরা। তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এক দল লোক তাঁদের বিদ্যালয়ের কক্ষে আটক করে মারধর করতে থাকেন। ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নিজেও শ্রমিকদের মারধর করেন। কয়েক শ লোক সেখানে জড়ো হন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেন। এর আগেই সেখানে আসাদুল খান ও আশরাফুল খান নামের দুই শ্রমিক মারা যান। আসাদুজ্জামান খান মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগেরও নেতা। দলের একাধিক নেতা বলেছেন, আসাদুজ্জামান ইচ্ছা করলে ঘটনা এড়াতে পারতেন।

শনিবার ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান যখন নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে যান পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে, সে সময়ও ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে শ্রমিকদের মারধর করার ছবি প্রকাশিত হলে তিনি ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার গা ঢাকা দেন। ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর মুঠোফোনটি সঙ্গে না নিয়ে বাড়িতে রেখে যান। সেটা কি তাঁর অবস্থান আড়াল করার জন্য? তাঁদের সন্ধানে পুলিশ মাগুরা ও যশোরে দুই দফা অভিযান চালিয়েও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিকারী ‘ওয়েলকাম পার্টি’ গঠন ও মাদক–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের ৪ মে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে ইউএনওর ওপর যে হামলা হয়, সেই মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন আসাদুজ্জামান। ৯ মে তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হলেও পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে তিনি ফের দায়িত্ব বুঝে পান। এ ছাড়া টিসিবির কার্ড দুর্নীতির কারণেও তাঁকে একবার বরখাস্ত করা হয়েছিল।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান গত শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দুবার বরখাস্ত হওয়ার পর পদ ফিরে পেয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান। তাঁর মনোভাব হলো, ‘কেউ কিছু করতে পারবে না।’ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।

ফরিদপুরে মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার কথিত অভিযোগে পরিকল্পিতভাবে দুই শ্রমিককে হত্যার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ পাওয়া নিয়ে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনাও ঘটেছিল এবং হুমকির মুখে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে তঁাদের ফের বাড়ি থেকে ডেকে এনে কাজে লাগানো হয়। ফলে এই হত্যাকাণ্ডকে শুধুই গণরোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই।

শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল হত্যাকারীদের ধরার বিষয়ে চূড়ান্ত সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে। সরকারের দায়িত্ব অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা। একই সঙ্গে সেখানকার প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো পক্ষ জনগণের শান্তি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করতে না পারে।

হত্যাকারী ও এর নেপথ্যের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।