সচেতনতার সঙ্গে দরদ মিশলে পরে দৃশ্যপট যে পুরোটাই বদলে যায়, তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বগুড়ার শেরপুরের একদল তরুণ। আগে যেখানে অনেকে বন্দুক কিংবা এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করতেন, এখন পুরো এলাকা পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। এর কৃতিত্ব পরিবেশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা নামে একটি সংগঠনের। উপজেলার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ সংগঠনের সদস্যরা নিঃসন্দেহে উল্লেখ করার মতো অবদান রাখছেন।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০২০ সালে একদল তরুণ পরিবেশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও শেরপুর পৌর শহরে সংগঠনটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানা ধরনের কর্মকাণ্ড করে আসছে। এর মধ্যে পাখি হত্যা না করার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার কাজটা তারা করছে। শুধু মৌখিক উপদেশ দিয়েই তারা থেমে থাকছে না। আহত পাখির পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটিও তারা করছে।
মে মাসের শেষভাগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারা দেশের সঙ্গে বগুড়ার শেরপুরেও ঝড়বৃষ্টি হয়। এর ফলে কয়েকটি গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। তাতে পাখির বাসাও মাটিতে ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়া একটি গাছে দুটি ঘুঘু পাখি ও একটি কাঠশালিকের বাসা ছিল। পাখির এই বাসাগুলোতে ছিল পাখির ছানা। সেই ছানাগুলো মাটিতে পড়ে আহত হয়।
স্থানীয় লোকজন পাখির ছানাগুলো উদ্ধার করে সংগঠনটির সদস্যদের খবর দেন। সংগঠনটির সদস্যরা আহত পাখিগুলো উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে পাখিগুলোকে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠার পর পরিবেশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা এ রকম শতাধিক পাখিকে পরিচর্যা করে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পাখির চিকিৎসা ও পরিচর্যার কাজে সহায়তা করে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গ্রামের মানুষ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক অব্যাহত রেখেছে তারা।
পাখির জীবন রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির তরুণদের উদ্যোগকে মোটেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। তরুণ প্রজন্ম যে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় অনেক বেশি সচেতন ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এটা তারই দৃষ্টান্ত। তরুণদের উদ্যোগকে শেরপুরের বড় একটা এলাকা হয়ে উঠেছে পাখির নিরাপদ বিচরণস্থল। তাঁদের এই দৃষ্টান্ত থেকে শেখার আছে অনেক।