দেশের উন্নতি বা সমৃদ্ধিতে শিল্পায়ন যেমন আশীর্বাদ, আবার বিপত্তিও আছে—যদি সেটি হয় অপরিকল্পিত। শিল্পায়নে আইন ও নীতিমালা কতটা মেনে চলা হয়, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে আমাদের পরিবেশ, নদী ও খালগুলো বিপর্যস্ত। শিল্পায়নে একটি জনপদ যেমন ইতিবাচকভাবে পাল্টে যেতে পারে, সেখানে আবার নেতিবাচক প্রভাবও তৈরি করতে পারে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায়। শিল্পায়নের চাপে সেখানকার নামাপাড়া নামের একটি এলাকা রীতিমতো অবরুদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। এলাকাটি থেকে বের হওয়া বা সেখানে প্রবেশ করা রীতিমতো অসম্ভব।
নামাপাড়ায় দুই হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। একটা সময় কৃষি ছিল তাঁদের প্রধান পেশা। গত দেড় দশকে এ পেশা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শিল্পায়ন তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে ঠিকই কিন্তু মহল্লাটির খোলামেলা পরিবেশ হারিয়ে গেছে। এমনকি মহল্লা থেকে বের হওয়ার গলিটির প্রশস্ততা কমতে কমতে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩ ফুট। জরুরি প্রয়োজনে কোনো গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের যন্ত্রাংশ কিছুই ঢুকতে পারে না। এমনকি ঘরের বড় কোনো আসবাবও নেওয়ার সুযোগ নেই। দুজন মানুষের একসঙ্গে হাঁটাই কঠিন হয়ে পড়ে। ১০ বছর ধরে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতে হচ্ছে এলাকাটির বাসিন্দাদের। তাঁদের আক্ষেপ, নানা জায়গায় দৌড়াদৌড়ির পরও কেউ সমাধান দেয় না। ফলে অনেককে ঘর ভাড়া দিয়ে অন্যত্র থাকতে হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নামাপাড়া থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটির দুই পাশে ইকো কটন মিলস লিমিটেড ও ওয়ান স্পিনিং মিলস লিমিটেড নামের দুটি শিল্পকারখানা জমি কিনে নেয়। তারা এই জমিতে সুউচ্চ প্রাচীর তৈরি করে। এর ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুর্ভোগের বিষয়ে লিখিতভাবে শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। পৌরসভা থেকে সংশ্লিষ্ট কারখানার লোকজনদের নিয়ে বসা হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। এ ব্যাপারে ওয়াস স্পিনিং মিলস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এলাকাবাসীর কষ্টের কথা বিবেচনা করে বর্তমানে চলাচলের রাস্তার জায়গাটুকু ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য শিল্পকারখানাটি সেটি করেনি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। সমস্যা সমাধানে যা করার, সবকিছু করব।’ কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এর আগে এ সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেনি। আমরা আশা করব, পৌর মেয়র আন্তরিকভাবেই বিষয়টির সমাধান করবেন।