নদ-নদী, খাল বা জলাভূমি দখল হয়ে যাওয়াটা নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করাটা বিরল একটি বিষয়। এ বাস্তবতায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ হওয়ার পর আবার দখল হলে, সেটি খুবই হতাশাজনক। হবিগঞ্জের খোয়াই নদের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ৪৫ বছর আগেও হবিগঞ্জ শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ছিল খোয়াই নদ। এ নদের পানি বাড়লে শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিত। এতে ১৯৭৬-৭৭ সালে নদের গতি পরিবর্তন করে বর্তমান স্থান থেকে দুই-তিন কিলোমিটার পশ্চিমে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ পরিবর্তনের কারণে পুরোনো অংশটি এখন পুরোনো খোয়াই নদ হিসেবে পরিচিত। দেদার দখলের কারণে ২০০ ফুট প্রশস্তের এ নদ কোথাও ১০ ফুট, কোথাও ২০ ফুটে এসে দাঁড়ায়।
নদ রক্ষায় ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘খোয়াই নদ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। নদের চারপাশ দখলমুক্ত করে ঢাকার হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এ প্রকল্পের একটি অংশে শহরের এ পুরোনো খোয়াই নদকে যুক্ত করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন নদের দুই পাড়ের পাঁচ শতাধিক স্থাপনাও উচ্ছেদ করে। কিন্তু প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবার দখল শুরু হয়েছে নদটি।
দখলদারেরা আবারও পুরোনো রূপে ফিরে গেছেন। পুরোনো খোয়াই নদ উদ্ধারে হবিগঞ্জের নাগরিকেরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। ফলে প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল। এতে হবিগঞ্জের মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই আশা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজেন ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ‘খোয়াই নদ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’টি এখনো অনুমোদন দেয়নি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ।
কিন্তু দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের কবলে পড়ে বহু নদ-নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া অনেক নদ-নদী আজ মৃতপ্রায় এবং এগুলোর পানিও দূষিত। এ অবস্থায় নদ-নদী রক্ষা এবং নদ-নদীকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশ্ন হলো, উচ্ছেদ করার পরও কেন দখলদারেরা আবার খোয়াই নদের জায়গা দখল করল? দখল-উচ্ছেদের চক্র থেকে বের হয়ে খোয়াই নদ রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।