সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হামেশা স্বাস্থ্য খাতের বিপুল উন্নয়নের কথা বলেন। সাফল্য ও অগ্রগতির বয়ান শোনান। কিন্তু তঁারা তলিয়ে দেখেন না কেন যক্ষ্মার মতো সহজে নিরাময়যোগ্য রোগেও হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে প্রথম আলোর প্রতিবেদন ছিল, ‘যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশে পিছিয়ে।’ এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআরবি পরিচালিত ইউএসএআইডির অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) কার্যক্রম আয়োজিত সেমিনারে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ বৈশ্বিক যক্ষ্মা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন ওষুধপ্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর প্রতি ১২ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১৫ সালে যক্ষ্মায় প্রতি লাখে ৪৫ জনের মৃত্যু হতো, সেটি কমে ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ২৫ জনে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, এ অগ্রগতি যথেষ্ট নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও স্বীকার করেছেন, বিশ্বের যে আটটি দেশে যক্ষ্মারোগী বেশি, তার একটি বাংলাদেশ। তিনি যক্ষ্মারোগীদের ৮২ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পান বলে জানিয়েছেন। আমাদের প্রশ্ন, শতভাগ নয় কেন?
যখন যক্ষ্মা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা কুসংস্কার ছিল, তখন স্লোগান দেওয়া হতো ‘যার আছে যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা’ বা ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই।’ আমরা তো সেই অবস্থা থেকে পার হয়ে এসেছি। এখন স্লোগান দেওয়া হয়, ‘যক্ষ্মা হলেও রক্ষা আছে।’ তবে এ রক্ষা তো আপনা–আপনি হবে না। কারও শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু থাকলে আগেভাগে তা শনাক্ত করতে হবে। এরপর চিকিৎসা করতে হবে। কেউ যাতে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে না দেন, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। যেসব গরিব মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন, চিকিৎসার পাশাপাশি তঁাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্র অনুযায়ী, আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামাতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। এর জন্য যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী কিংবা অশনাক্ত রোগীদের অসচেতনতাকে দায়ী করলেই সরকারের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, তারা সফলতার সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করেছে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ রোগে মারা যাওয়া কিংবা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ আটটি দেশের তালিকায় থাকা সাফল্যের নমুনা নয়।
চলতি বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’ এখন সরকারকে কাজ করেই দেখাতে হবে, তারা নির্মূল করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শতভাগ রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকার কারণেই দরিদ্র মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়মিত পরীক্ষার কাজটি করা প্রয়োজন। রোগী হাসপাতালে আসার আগে রোগ শনাক্ত করার কাজটি করতে হবে। প্রচারকাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আমরা চাই এসডিজির মেয়াদের আগেই যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনা হোক।