সন্দ্বীপের ধান

চালকল স্থাপনে উদ্যোগ নিন

কৃষকের ধান উৎপাদন কমে গেলে দেশে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। আমাদের কৃষকেরা এখনো দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বড় ভরসা। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, সেই কৃষককে ফসল ফলিয়ে খরচ ওঠাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ধান কেনা হয়। এতে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পান। কিন্তু সন্দ্বীপের কৃষকেরা সেটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ, সেখানে কোনো চালকল নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে সন্দ্বীপের ধানখেতগুলো থেকে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় চাষি এবং সন্দ্বীপের বাইরে থেকে আসা শত শত শ্রমিক ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁচি চালাচ্ছেন আমন ধানে। তবে লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে গেলে নতুন ধানের আনন্দ মিলিয়ে যায় দ্রুতই। কারণ, সরকার নির্ধারিত অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে তাঁরা বাধ্য হন। এতে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকাও উঠে আসে না অনেকের।

চলতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি ৩৩ টাকা দরে ধান কেনা হচ্ছে। তবে সন্দ্বীপের ধানভান্ডার হিসেবে খ্যাত সবুজ চরের চাষিরা স্থানীয় কারবারিদের কাছে বিক্রি করেন ২০ টাকা কেজি দরে। স্থানীয় এক চাষি হিসাব করে জানান, তাঁর ৩০ কানি জমি থেকে প্রাপ্ত ৪৫ টন ধান বিক্রি করে তিনি পাবেন ৯ লাখ টাকা। সরকারি মূল্যে তিনি পেতেন ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আরেক চাষি তাঁর উৎপাদিত ধান বিক্রি করে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো পাবেন। অথচ এই বছরের চাষে তাঁর সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি খরচই হয়েছে। 

সন্দ্বীপের কৃষকদের দাবি, সরকার তাঁদের থেকে ধান কিনলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে তাঁরা ধান দেবেন সরকারকে; কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে কৃষককে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে লাভের মুখ দেখাতে হলে সরকারিভাবে ধান কেনার উদ্যোগের বিকল্প নেই। সন্দ্বীপ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকর্তার বক্তব্য, চালকল না থাকায় ধান কিনে চাল করতে হলে নিতে হবে চট্টগ্রামে। সেই চাল আবার সন্দ্বীপে নিয়ে আসতে খরচ পড়বে অনেক বেশি। ফলে সন্দ্বীপের কৃষকের কাছ থেকে ধান–চাল কেনা সম্ভব নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমার বক্তব্য, একটি চালকল স্থাপনের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আন্তরিকভাবে দেখবেন তিনি। এ বিষয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন তিনি। তবে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, চালকল না থাকলেও তাঁরা সন্দ্বীপের কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবেন।

আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য কর্মকর্তার কথায় আশ্বস্ত হতে চাই। একটি উপজেলায় চালকল থাকবে না, তা মানা যায় না। কৃষকদের এ সংকট থেকে পরিত্রাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।