সাঁতারুদের মহল্লায় দুর্দিন

বৃশালিখায় সুইমিংপুল কেন তৈরি হয় না

একটা নদী একটা জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও পারদর্শিতা কীভাবে বদলে দিতে পারে, তার একটা বড় দৃষ্টান্ত পাবনার বেড়া পৌরসভার বৃশালিখা মহল্লা। এর পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে ইছামতী নদী। দুই দশক আগেও নদীটি ছিল খরস্রোতা ও চওড়া। নদীতে সাঁতার কেটে সেখানকার শিশু-কিশোরেরা সাঁতারু হিসেবে বেড়ে উঠত। ফলে বৃশালিখা মহল্লা দেশের সাঁতারু তৈরির একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। সেখানকার সাঁতারুরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কৃতিত্ব দেখিয়ে বহু পদক জিতে নিয়েছিলেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ১০ বছর আগে ইছামতী নদীর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করায় সেটি মরা খালে পরিণত হয়। পানিপ্রবাহ না থাকায় সেখানে আর সাঁতার কাটার অবস্থা নেই। ফলে ‘সাঁতারুদের মহল্লা’ থেকে এখন আর সাঁতারু তৈরি হয় না। ইছামতী নদী সরু খালে পরিণত হওয়ার পর তিন মন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বেড়ায় সুইমিংপুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এত বছরেও সেটা বাস্তবে রূপ পায়নি।

বৃশালিখার বাসিন্দাদের সাঁতারু হয়ে ওঠার বৈশিষ্ট্য নিঃসন্দেহে বিরল। প্রয়োজন ছিল জনগোষ্ঠীর এই গুণ যাতে আরও ভালোভাবে বিকশিত হয়, সরকারি পর্যায়ে সেই উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে উল্টো চিত্রটাই দেখা গেল। বৃশালিখা মহল্লার খ্যাতিমান সাঁতারুরা জানিয়েছেন, সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ছিল সেখানকার সাঁতারুদের সোনালি সময়। সে সময় দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার অর্ধেক থেকে চার ভাগের এক ভাগ পদক আসত সেখানকার সাঁতারুদের দখলে। কৃতী সাঁতারু হওয়ার কারণে মহল্লার শতাধিক সাঁতারু সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার পেয়েছেন।

শুধু ইছামতী নদী মরা খালে পরিণত হওয়ার কারণে নয়, গত এক দশকে এলাকার বেশ কয়েকটি পুকুরও ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখানকার কৃতী সাঁতারুরা এখন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে সাঁতারে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাঁদের বেড়ায় গিয়ে সেখানকার শিশু-কিশোরদের সাঁতারের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। কিন্তু নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সাঁতার কাটার জায়গা না থাকায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ খুব বেশি কাজে লাগছে না।

পাবনার বেড়ায়, বিশেষ করে বৃশালিখা মহল্লা থেকে অতীতে যখন এত সাঁতারু তৈরি হয়েছে, তার মানে হলো, সেখানকার বাসিন্দাদের ভেতর দক্ষ সাঁতারু হওয়ার সহজাত বৈশিষ্ট্যটি রয়েছে। সুযোগ ও প্রশিক্ষণ পেলে এখান থেকে এমন সাঁতারু তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়, যাঁরা সাফসহ অন্যান্য পর্যায়ে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারেন।

ঐতিহ্যগতভাবেই সেখানকার শিশু-কিশোরদের মধ্যে সাঁতারের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বেড়ায় দ্রুত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, উপকরণসহ সুইমিংপুল নির্মাণ করতে হবে। আমরা আশা করি, সাঁতারুদের মহল্লাটি আবার সাঁতারুদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠবে।