মাদক এখন সমাজে অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এ মাদকের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা অপরাধ, সামাজিক ও পারিবারিক অশান্তি। আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত চিঠি আসে, গ্রাম-মফস্সল শহরগুলোর মাঠগুলোতে আগের মতো খেলাধুলা হয় না। অনেক জায়গায় সন্ধ্যা হলে বসছে মাদকের আসর।
বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের খবর প্রায়ই আমরা দেখি। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও সেটি আদতে কতটা সফল হয়েছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। একটা সময় মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সচেতনতামূলক অনেক প্রচারাভিযান গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সামাজিক নানা সংকটের চাপে সেখানেও যেন ভাটা পড়েছে।
এরপরও কেউ না কেউ মাদকমুক্ত একটি সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেন। তাঁদের একজন হচ্ছেন হারুন মিয়া। মাদকের প্রতি মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সতিষা গ্রামের এই চা-দোকানি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে তিনি প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।
হারুন মিয়া আসলে কী করেছেন? নিজের নামেই তাঁর চায়ের দোকানের নাম—হারুন টি হাউস। সেই দোকানের স্লোগান হচ্ছে, ‘মাদক ছাড়ুন, চা ধরুন’। বিষয়টিকে তিনি জনপ্রিয় করে তুলতে দিচ্ছেন সেরা গ্রাহক সম্মাননাও।
২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে দোকানের সামনে এ সম্মাননার আয়োজন করে আসছেন। গত শনিবার পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকায় পঞ্চমবারের মতো হয়ে গেল এমন অনুষ্ঠান। এ বছর হারুন তাঁর ৫০ জন গ্রাহককে সম্মাননা দেন। দিয়েছেন নানা ধরনের উপহারও।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিরা। পরে মাদক বর্জনের ডাক দিয়ে শোভাযাত্রাও করা হয় সেখানে। এতে প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘গ্রাহকদের সম্মাননা দেওয়ার পাশাপাশি হারুন মাদক বর্জনের ডাক দিয়ে আসছেন, যা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।’
চা বিক্রির পাশাপাশি হারুন পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। একটা সময় সংসারের অভাব-অনটনের কারণে স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। নেমে যেতে হয় জীবিকার কাজে। কিন্তু পড়াশোনা করার স্বপ্নটা তিনি লালন করে আসছিলেন। অদম্য ইচ্ছার জোরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪ বছর বয়সে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এসএসসি পাস করেন।
বর্তমানে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন। তাঁর স্বপ্ন নামকরা আইনজীবী হওয়া। হারুনের মতো কর্মজীবী তরুণেরা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার।
যেখানে তাঁর মতো অনেক তরুণ মাদকের অন্ধকারে হারিয়ে গেছেন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবনসহ গোটা সমাজকে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন, সেখানে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে মানুষকে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। আমরা হারুন মিয়াকে অভিনন্দন জানাই।