সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ইটের ধুলার আস্তরণ বইয়ে

ভাটাটি সরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

পরিবেশ ও প্রকৃতির সর্বনাশ করে যাচ্ছে ইটভাটা। সেগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ ও অনুমোদনহীন। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটায় অভিযান চালিয়ে থাকে, জরিমানা করে থাকে, এমনকি অনেক ভাটা গুঁড়িয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, সে ভাটার চিমনি থেকেই বের হচ্ছে ইট তৈরির ধোঁয়া। তার মানে হচ্ছে, যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।

অনেক সময় সেসব অভিযান লোকদেখানো বলেও অভিযোগ ওঠে। ইটভাটার ক্ষেত্রে ভয়াবহ যে বিষয়টি কয়েক দিন পরপর সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে, তা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে অনেক ভাটার অবস্থান। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে।

সেখানে একটি মাদ্রাসার একেবারে গায়ের ওপর এসে পড়েছে একটি ইটভাটা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বড়রিয়া গোপালপুর গরিব হোসেন বারী মিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২২। আশপাশের তিনটি গ্রাম থেকে এখানে পড়তে আসে শিশুরা। তবে একসময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল প্রতিষ্ঠানটিতে।

গা ঘেঁষে ভাটা নির্মিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। ধুলাবালু তো আছেই, ভাটার গাড়িগুলো যেভাবে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করে, তাতে অভিভাবকেরা শিশুদের এখানে পাঠাতে ভয় পান। মাদ্রাসার ধার ঘেঁষেই ভাটায় ইট পোড়ে। ধুলাবালুর আস্তরণ পড়ে যায় বই ও টেবিলে। এর মধ্যে চলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আর একচিলতে মাঠের মধ্যে খেলাধুলা। অথচ আইন অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাটা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।

নব্বইয়ের দশকে স্থাপিত আরব ইটভাটা নামের ভাটাটি সম্প্রসারিত হতে হতে এখন রীতিমতো মাদ্রাসাটির ওপর এসে পড়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধও তৈরি হয়েছে ভাটাটির। জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইটভাটাটি অনেক পুরোনো ও স্থায়ী চিমনির হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ফলে জেলা প্রশাসনেরও নিবন্ধন নেই।

তাহলে এত দিন ধরে সেটি কীভাবে চলছে, তা বড় প্রশ্ন। যেসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয়, তারও বৈধতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে বক্তব্য পরিবেশ অধিদপ্তরের। এ কারণে ওই ভাটা ভেঙেও দেওয়া হয়েছিল। জরিমানা করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

এরপরও ইটভাটাটি বহাল তবিয়তে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক আবার ইটভাটাটি সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও ভাটামালিক বলছেন, এ রকম কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। এখন জেলা প্রশাসনের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছাই দেখার অপেক্ষা।