সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবে আর কতটা কাগুজে, সেটা পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়। অথচ উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক অসুখ সারানো সম্ভব। তাতে জেলা, বিভাগ কিংবা ঢাকার ওপর চিকিৎসার যে নির্ভরশীলতা, সেটা অনেকখানি কাটিয়ে ওঠা যেত।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের জরাজীর্ণ কোয়ার্টারে চলছে অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম। ১৬ বছর আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি। মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় থমকে আছে কাজ। অন্যদিকে চিকিৎসকের ১৪টি পদ থাকলেও বর্তমানে পাঁচজন দায়িত্ব পালন করছেন।
কর্মচারীদের তিনটি কোয়ার্টারে অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ল্যাব ও প্রশাসনিক কাজ চালানো হচ্ছে। একটি কোয়ার্টারে ছয়টি ছোট ছোট কক্ষে ২০টি শয্যা দিয়ে অন্তর্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। শয্যাসংখ্যা কম হওয়ায় রোগীদের স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বৃষ্টি হলে ভবনটির ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে মেঝে ভিজে যায়। এ রকম একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসকেরা কীভাবে চিকিৎসাসেবা দেবেন আর রোগীরাই-বা কীভাবে সেই সেবা পেয়ে সুস্থ হবেন! প্রশ্ন হচ্ছে এই শোচনীয় পরিস্থিতি কীভাবে হলো? অন্যান্য খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে অবকাঠামো নির্মাণের হিড়িক আমরা দেখতে পাই।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পিরোজপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করে ‘মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাজেট ছিল ৫ কোটি টাকা। ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করে তা ফেলে রাখায় ২০১৪ সালে সেই কার্যাদেশ বাতিল করে।
এরপর ২০২২ সালে ‘মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ’ নামের আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তারা মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ করতে পারায় কার্যাদেশও বাতিল করা হয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আদালতে যাওয়ায় নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
সময়ের কাজ সময়ে না হওয়ায় ৫ কোটি টাকার প্রকল্প ২৫ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কেন কার্যাদেশ দেওয়া হলো, যাদের নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করার সক্ষমতাই নেই। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার মধ্যে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি রয়েছে। তদন্ত করে সেটা বের করে আনা জরুরি।
ভবনসংকট ও চিকিৎসক কম থাকায় মানুষ কেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। মামলা নিষ্পত্তি করে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি দ্রুত নির্মাণ করুক।