সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে

চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৭ পয়েন্ট কমে ছয় হাজারের কাছাকাছি নেমে আসে। অবশ্য দরপতন হলেও লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। গত দেড় বছরের মধ্যে রোববার এই সূচকের অবস্থান ছিল সর্বনিম্ন।

২০২২ সালের ২৮ জুলাই সূচকটি ৫ হাজার ৯৮১ পয়েন্টে ছিল। এদিন সূচকটি ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ায় আরও পতন ঠেকাতে শেয়ারের দামের ওপর ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে স্বাভাবিক ছিল না, বিলম্বে হলেও কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিল। রোববার বাজারে পতন হলেও গতকাল মঙ্গলবার অবশ্য শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেন উভয়ই বেড়েছে।

দেড় বছর পর প্রথম দফায় ২১ জানুয়ারি থেকে ৩৫টি বাদে বাকি সব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৩ জানুয়ারি থেকে তুলে নেওয়া হয় আরও ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। এটি সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি।

শেয়ারবাজারের একাধিক শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা জানান, ২১ থেকে ২৮ জানুয়ারি—ছয় কার্যদিবসে কিছু কিছু শেয়ারের দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এতে অনেক কোম্পানির শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়েছে। তবে শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করলে বাজারে বিক্রির চাপও কমে যায়।

শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ফোর্সড সেল যখন বেড়ে যায়, তখন বাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দেয়। তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগও কমে যায়। তবে দাম বাড়তে থাকলে তখন ক্রেতাও তৈরি হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ থাকলে আতঙ্কিত হয়ে তাঁর সেসব শেয়ার বিক্রির কোনো দরকার নেই। সাময়িকভাবে এসব শেয়ারের দাম কমলেও তা ঘুরে দাঁড়াবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সূচকের বার্ষিক সমন্বয় করতে গিয়ে ডিএসইএক্স থেকে ৮৩ কোম্পানির বাদ পড়া ও কারসাজির শেয়ার সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি ডিএসই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করলেও কোম্পানিগুলোকে সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা বা নতুন করে সূচকটি সমন্বয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, অনিয়ম ও কারসাজি করে গত দেড় বছরে যেসব কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হয়েছে, সেসব কোম্পানিই এখন নির্ধারণ করছে ডিএসইএক্স সূচকের উত্থান-পতন। সূচক থেকে বাদ পড়ে গেছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তালিকাভুক্ত কোম্পানি। একদিকে সূচক গণনায় বেড়েছে বাজে হিসেবে পরিচিত কোম্পানির অবদান, অন্যদিকে কমে গেছে ভালো কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব। ফলে ডিএসইএক্স সূচকটি বড় ধরনের ‘ভুল বার্তা’ দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএসইসি সূচকের এই ভুল বার্তা অব্যাহত রাখবে নাকি সূচক সংশোধনের উদ্যোগ নেবে? ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে শেয়ারবাজার চাঙা রাখার চেষ্টা করেছিল, যা সঠিক ছিল না। শেয়ারবাজারকে চলতে দিতে হবে স্বাভাবিক গতিতে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খেয়াল রাখতে হবে ১৯৯৬ ও ২০১০-এর পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়। সে সময়ে শেয়ারবাজারের ‘বড় খেলোয়াড়েরা’ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০১০-এর শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত কমিটি হলেও সরকার এর সুপারিশ বাস্তবায়ন বা দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করেনি।