সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ঠিকাদারের প্রতি প্রশাসনের এই প্রীতি কেন

ধামরাইয়ের কায়েতপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুরোধেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বেতলাই বিল খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছ পাওয়া যাচ্ছিল না; কিন্তু প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধির প্রতিবেদনটি পড়ে বোঝা যাচ্ছে, খাল কেটে আসলে কুমির আনার আয়োজন চলছে ওখানে।

চার মাসের কাজ আট মাসেও শেষ হয়নি। খনন করে যে পরিমাণ মাটি তোলার কথা, তার চেয়েও বেশি তোলা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে না পাওয়া যাবে মাছ, না বাঁচানো যাবে জমি। সংলগ্ন জমি এখন বিলে পড়ে যাওয়ার দশা। এ নিয়ে যথারীতি প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই। ধামরাই উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার আবদুর রশিদ মনের সুখে বিল খনন করেই যাচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কত ঘন ফুট মাটি খনন করা যাবে, তা–ও কার্যাদেশে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে। বলা হয়েছিল, কার্যাদেশ দেওয়ার সময় বিলের যে তলদেশ তা থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত খনন করা হবে। প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানান, প্রতিদিন দুই থেকে চারটি ড্রেজার এই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ৪৮ লাখ টাকায় বিল খননের কাজ পেয়েছিলেন ঠিকাদার। যে পরিমাণ মাটি তিনি বিল থেকে তুলেছেন, তার দাম আড়াই কোটি টাকা।

ঠিকাদার বলেছেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর কয়েক মাস ধরে তিনি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটছিলেন। বন্যার পানি এসে যাওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এরপর ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটছেন। জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে এপ্রিলে। চার মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ির ফল কী হতে পারে, প্রশাসন কি সেটা জানে না?

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি হয়তো ঠিকাদারের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। নির্দিষ্ট সময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করতে পারেননি, কোনো নিয়মকানুনও মানছেন না; কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তা বলে বসলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বন্যা, শ্রমিক–সংকটসহ কিছু জটিলতার কারণে ঠিকাদার যথাসময়ে খননকাজ শেষ করতে পারেননি। শিগগিরই তিনি খননকাজ শেষ করবেন, প্রশাসন শর্ত ভঙ্গ হচ্ছে কি না যাচাই করবে।

আমরা কি ধরে নেব, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের কোনো যোগাযোগই নেই? নইলে মানুষের চাষের জমি বিলে পড়ে যেতে পারে এমন অবস্থায় পৌঁছানোর পরও তিনি খবর পাননি কেন?

বাংলাদেশে আইন ও নীতির কোনো শেষ নেই। ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার বয়সও তিন বছর হতে চলল। এসব নীতিমালায় কেবল কথার ফুলঝুরি। প্রশাসন কি জবাব দেবে—ধামরাইয়ের বেতলাই বিল খননে শর্ত না মানার পরও কেন ঠিকাদারকে জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না?