গুপ্ত হামলা–হত্যা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন নির্বিকার 

নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এই হামলা মারাত্মক রূপ নেওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত শনিবার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে হেঁটে গ্রামের পাশে পুকুরে যাওয়ার সময় আবদুর রশিদ (৬০) নামের এক মৎস্যচাষির ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে মুখোশধারীরা। পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী দুজনকে আটক করে পুলিশে দেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি রড উদ্ধার করা হয়। 

ওই ঘটনায় আহত মৎস্যচাষির ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রোববার আদমদীঘি থানায় আটক দুই যুবকের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। আহত আবদুর রশিদ বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাদীর অভিযোগ, ‘পুলিশ মামলা নিতে অনেক গড়িমসি করেছে। পরে মামলা নিলেও এজাহারে আমরা যা লিখেছিলাম, সেটার অনেক জায়গায় পরিবর্তন করে এজাহার নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তির কাছ থেকে রড ও চাকু পাওয়া যাওয়ার পরও পুলিশ এখন পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করেনি।’ 

নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘নওগাঁয় ঘটে যাওয়া দুটি খুনের ঘটনার সঙ্গে আদমদীঘিতে মৎস্যচাষির ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তির সংযোগ রয়েছে কি না, আমরা খতিয়ে দেখছি।’ দুই ঘটনার হোতা অভিন্ন ব্যক্তিরা হলে আতঙ্কিত হতে হয় বৈকি। খুনের আসামিরা এত দিনেও কেন গ্রেপ্তার হলো না? 

গত ২০ নভেম্বর বিকেলে নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর এলাকায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মামুনুর রশিদ ও ১৭ নভেম্বর রাত নয়টার দিকে নওগাঁ শহরের কাঁঠালতলী এলাকায় নওগাঁ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করে মুখোশধারীরা। ওই দুই ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

এসব গুপ্ত হামলা কিসের ইঙ্গিত দেয়? গুপ্ত হামলাকারীরা বেছে বেছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের ওপরই হামলা চালাচ্ছে। এ কারণে ভুক্তভোগীরা থানা-পুলিশে যেতেও ভয় পান। গেলেও প্রতিকার পান না। যেখানে পুলিশ ‘গায়েবি’ মামলার আসামিদের ধরতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাকড়াও করছে, সেখানে তারা মুখোশধারী গুপ্ত হামলাকারীদের ধরতে পারছে না! বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কেউ অপরাধ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা গুপ্ত হামলার শিকার হলে কেন রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকবেন?

এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরও দায় আছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিবিড় সম্পর্ক আছে। সে ক্ষেত্রে গুপ্ত হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে এবং অপরাধীরা যাতে আইনের আওতায় আসে, সে ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয় থাকতে হবে। 

সবশেষে বলব, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাছাই করা নীতি নিতে পারেন না। প্রতিটি গুপ্ত মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা হলেই গুপ্ত হামলা নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে, তার অবসান ঘটবে।