সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কৃষকদের দুশ্চিন্তা দূর করুন

অনাবৃষ্টির কারণে আমনের আবাদ নিয়ে কৃষকেরা শঙ্কায় আছেন। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচেও বাড়তি খরচ যুক্ত হয়েছে। কৃষিজমির পাশে নদী বা খাল থাকলে সেটিই এখন বড় ভরসা কৃষকদের জন্য। তবে সেই সুযোগ থাকলেও কাজে লাগাতে পারছেন না খুলনার কয়রা উপজেলার কৃষকেরা। কারণ, সেসব নদী ও খালের পানি লবণাক্ত।

সামান্য বৃষ্টি হলেও সেই পানিও ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ, সেখানকার জলকপাটগুলো (স্লুইসগেট) কোনো কাজে আসছে না। সেসব জলকপাট হয় নষ্ট হয়ে গেছে, নয়তো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে কৃষকের তেমন উপকারে আসছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাপনে নানা সংকট নেমে এসেছে। সেখানে ঠিকঠাকমতো আবাদ না হলে তঁারা কী করে বাঁচবেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপকূলবর্তী কয়রার ভেতর দিয়ে কয়েকটি নদী বয়ে গেছে। সেগুলোর চারপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ রয়েছে। প্রয়োজনে কৃষিজমির পানি সরিয়ে দিতে বা নদী থেকে পানি তুলতে পুরো উপজেলায় ২৩টি জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ করা হয়। এখন নষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কোনো এলাকায় পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কোনো এলাকায় খালের লবণাক্ত পানি ঢুকে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে না পারায় নদীতে চলে যাচ্ছে।

কয়রার জলকপাটগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল নব্বই দশকে। এরপর সেগুলোর সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা বা দীর্ঘমেয়াদি সুফল ভোগ করার জন্য পরিচর্যা করার প্রবণতা আমরা কম দেখতে পাই। যার কারণেই জলকপাটগুলোর এ দশা। সেগুলোর হয় দরজা ভেঙে গেছে, নয়তো কপাট বাঁকা হয়ে গেছে বা মরিচা পড়েছে অথবা পাশে ছিদ্র হয়ে গেছে। দড়ি দিয়ে বেঁধেও কপাট ওঠানো-নামানোর কাজ চলছে। এভাবেই বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে, সেগুলোর প্রতি পাউবোর সুনজর পড়েনি।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ বছর ১৪ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু জলকপাটগুলো অকেজো হওয়ার কারণে সমস্যায় পড়েছেন কৃষকেরা।

জলকপাটগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার বা মেরামত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে পাউবোর বক্তব্য, কয়রার অকেজো ও ঝুঁকিপূর্ণ জলকপাটগুলোর তালিকা করে পুনর্নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। আমরা আশা করব, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কয়রার জলকপাটগুলো সংস্কারে গুরুত্ব দেবে, সেখানকার কৃষকদের দুশ্চিন্তা দূর করতে এগিয়ে আসবে।