সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

‘গায়েবি’ ঋণের ফাঁদ

হতদরিদ্রদের সঙ্গে এই অবিচার কেন

খেলাপি ঋণ আর ঋণ জালিয়াতিতে চরম বিশৃঙ্খল ব্যাংক খাত। একদিকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ঋণের জন্য কৃষকের গ্রেপ্তার ও ঘরছাড়া হওয়ার খবরও আমাদের দেখতে হয়েছে।

সেই ধারাবাহিকতায় লাখ লাখ টাকায় ‘গায়েবি ঋণে’ রীতিমতো মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ৫৫ জন হতদরিদ্রের ওপর। তাঁদের নামে ব্যাংকে হিসাব খুলে তুলে নেওয়া হয়েছে এসব টাকা। এখন ঋণ পরিশোধে ব্যাংকের নোটিশ পেয়ে দিশাহারা এসব মানুষ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারিটোলা গ্রামের এসব মানুষ পেশায় কেউ কৃষক, কেউ বাবুর্চি, কেউ দিনমজুর। একদিন কাজে না গেলে তাঁদের পেটে ভাত জোটে না। অনেকের ঘরবাড়িও বেহাল। ব্যাংকে কীভাবে ঋণের জন্য আবেদন করতে হয়, তা-ও জানেন না।

তাঁরা কেউ জানেন না তাঁদের নামে জনতা ব্যাংকের বাড়বকুণ্ড শাখায় একাধিক হিসাবের বিপরীতে প্রায় কোটি টাকার ঋণ তোলা হয়েছে। ১০ আগস্ট ব্যাংক থেকে তাঁদের কাছে নোটিশ পাঠিয়ে বলেছে, ১৫ দিনের মধ্যে সুদসহ সমুদয় অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনা মহামারির ধাক্কা এখনো সইতে হচ্ছে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষকে। সেই মহামারির প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকে হিসাব খুলে দিয়ে বাড়বকুণ্ডের এসব মানুষকে গায়েবি ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় এক ব্যক্তি ও জনতা ব্যাংকেরই একজন কর্মকর্তা এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই ঋণের টাকা ফেরত পেতে পদক্ষেপ নেবে। সে অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু এই হতদরিদ্র ব্যক্তিরা প্রায় কোটি টাকা কীভাবে ফেরত দেবেন? তাঁদের প্রতিজনের একেকটি হিসাবের বিপরীতে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে; যাঁদের অনেকের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় অবস্থা।

এ দেশের দরিদ্র মানুষকে কতভাবেই না অবিচারের শিকার হতে হয়, তারই একটি জ্বলন্ত প্রমাণ এটি। এখন এসব মানুষ আইনিভাবে হেনস্তা হতে পারেন, এমনকি তাঁদের কারাগারেও যেতে হতে পারে।

এটি কি হতদরিদ্র মানুষের জীবন নিয়ে নিষ্ঠুর তামাশা নয়? সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’

আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে এসব দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও বিষয়টিকে সদয় দৃষ্টিতে দেখবে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।