শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ

ভাঙা অংশ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করুন

বিগত সরকারের আমলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বহুস্তরীয় দুর্নীতির কারণে তার পরিপূর্ণ সুফল সাধারণ মানুষ খুব কম ক্ষেত্রেই পেয়েছে। সরকারি সংস্থা ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর অবৈধ অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল এসব প্রকল্প। তা না হলে কেন কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে প্রায় ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাত্র দুই বছরের মাথায় জায়গায় জায়গায় সিসি ব্লক ধসে যাবে? এর ফলে দ্বীপটির প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দার জীবন–জীবিকা ও জানমাল হুমকির মুখে পড়ল, তার দায় কে নেবে?

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জুন মাসে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। প্রথম দিকে বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ টেকসই ছিল, কিন্তু দক্ষিণপাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি, সেখানে এসে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করায় বাঁধের কাঠামো দুর্বল হয়েছে। 

প্রথম আলোর প্রতিনিধি সরেজমিন দেখতে পেয়েছেন, শাহপরীর দ্বীপ এখন আতঙ্কগ্রস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০টি জায়গায় সিসি ব্লক ধসে পড়ায় জোয়ারের পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। জোয়ারের ধাক্কায় মাটির বাঁধ ভেঙে গেলে আরও ঝুঁকি তৈরি হবে। এ পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে শত শত মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা অবকাঠামো সাগরগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের কাছাকাছি দূরত্বেই রয়েছে বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি।

এর আগে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটির পশ্চিম পাশে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। ওই সময়ের জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীর দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একরের চিংড়িঘের ও ফসলি জমি সাগরগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ১ কিলোমিটার ভাঙা বাঁধ নির্মাণে ১০ বছরে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে পাউবো। কিন্তু দুর্নীতির কারণে বেড়িবাঁধটি পূর্ণাঙ্গভাবে করা যায়নি। ২০২২ সালে নতুনভাবে করা বেড়িবাঁধটির ক্ষেত্রেও একই পরিণতি দেখা যাচ্ছে। 

পাউবো টেকনাফের উপসহকারী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধের ১০০ মিটারে নতুন করে সিসি ব্লক স্থাপনের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন বাঁধ মেরামতের জন্য কেন বরাদ্দ দিতে হচ্ছে? দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও হাওর অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে পাউবোর বিরুদ্ধে। অনেক সময় তাদের গাফিলতির কারণে জানমালের প্রভূত ক্ষতি হয়। পাউবোকে জবাবদিহির আওতায় আনার সময় কি হয়নি? 

শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করুন।