সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

২০ হাজার মানুষের স্বস্তি

সেতু নির্মাণ করায় গ্রামবাসীকে অভিবাদন

একটি ভালো সড়ক বা সেতু না থাকায় এখনো অনেক গ্রাম পিছিয়ে আছে। কৃষিপণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে শিশু–কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া, মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নিতে গেলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। সেতু ভেঙে পড়ায় এমন ভোগান্তির মুখেই পড়েছিলেন যশোর সদরের ডাকাতিয়া গ্রামের মানুষ। তবে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নিজেরা নিজেদের এই সমস্যা ঘুচিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় কাজ। 

ডাকাতিয়া গ্রামে একটি পাকা সেতু ছিল, যেটি ১০০ বছরের পুরোনো। সদর উপজেলার কাশিমপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের মধ্যে শতাব্দীকাল ধরে সেতুবন্ধ তৈরি করে রেখেছিল সেতুটি। সেটির ওপর নির্ভরশীল ছিল ২৬টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। অবশেষে মাসখানেক আগে এক বন্যায় সেতুটি ভেঙে পড়ে। বিপাকে পড়েন এসব মানুষ। খবর পাওয়ার পরও এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান সেতুটি সংস্কার করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এতে গ্রামবাসী বসেও থাকেননি। নিজেরাই নেমে পড়েন নিজেদের দুর্ভোগ লাঘবে। গত শুক্রবার টাকা ও স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ শুরু করেন এলাকাবাসী। এখন বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে মানুষ চলাচল করছেন।

এভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু বা সড়ক নির্মাণ করা নতুন নয়। এরপরও আমরা যশোরের দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের এ কর্মকাণ্ডের জন্য সাধুবাদ জানাতে চাই। এসব স্বেচ্ছাশ্রমের ঘটনা সরকারি কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকেই চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় না, সমাজের সামষ্টিক শক্তিকেও প্রকাশ করে। সমাজের যেকোনো সংকট মোকাবিলায় সামাজিক শক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ছোট ছোট এমন স্বেচ্ছাশ্রমে আরও বেশি প্রতিফলন হয়। সেই অর্থে এসব ঘটনা কোনোভাবেই ছোট নয়।

ভৈরব নদের দুই পাড়ে আড়াআড়ি মাটি দিয়ে ভরাট করে কালভার্টের মতো ডাকাতিয়া গ্রামের সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। ফলে ভৈরব নদের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নদের সঙ্গে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ঠিক রেখে এবার নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে। এর ফলে ভৈরব নদকে আবারও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) যশোর কার্যালয়ের বক্তব্য, ডাকাতিয়া এলাকায় নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

অদম্য গ্রামবাসীর দাবি দ্রুত পূরণ হোক। আমরা আশা করি সেতুটির জন্য প্রকল্প অনুমোদন ও বরাদ্দ ছাড় করা হবে।