সম্পাদকীয়

আলুর দামবৃদ্ধি: সাপুড়ে লাগলে তাঁকে খুঁজে বের করুন

ডিমের পর এবার আলুর দাম বাড়তির দিকে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে গতকাল ৪২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। গত বছর এই সময়ে আলুর দাম ছিল ২৪ টাকা। আলুর দাম কেন বাড়ছে, তার কোনো জবাব কি সরকার দেবে? নাকি এবারও সিন্ডিকেটকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলবে? কারণ, দেশে তো আলুর কোনো ঘাটতি নেই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু আছে, তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভালোভাবে চলবে। এর মধ্যেই বাজারে নতুন আলু উঠে যাবে। ফলে ঘাটতির কোনো কারণই নেই। খোদ বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এই পরিমাণ ১ কোটি ১২ লাখ টন। দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। বোঝাই যাচ্ছে আলুর কোনো ঘাটতি নেই। রোববার সংবাদ সম্মেলন করে হিমাগারমালিকদের সংগঠন অভিযোগ করেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন।

সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে হিমাগারে আলু আসতে শুরু করে। তখন হিমাগার শেডে কাঁচা আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ২৬ থেকে ২৭ টাকা। এই দরেই আলু বিক্রি হচ্ছিল। আর মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এই মূল্যবৃদ্ধি তাদের ভাষায় ‘কাঙ্ক্ষিত নয়’।

সরকার কি তবে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ডিম, আলু এমনকি ডাবের মতো প্রায় সব খাদ্যপণ্যের বিক্রেতা সিন্ডিকেটের প্রতি সহানুভূতিশীল? তাই এক এক করে সব পক্ষকে লাভ করার সুযোগ করে দিচ্ছে? বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংসদে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তা তাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছু নয়। যদিও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সব সময় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে, এমন বক্তব্য শুনতে শুনতে আমরা হয়রান। অথচ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও–ও বলেছে, বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যের সূচক গত আগস্টে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। কারণ, চাল ও চিনির দাম বাড়লেও এর আগের মাসে বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যায়। এফএও বলছে, ভারতের রপ্তানি বিধিনিষেধের পর চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিক সূচকে দুগ্ধজাত পণ্য, উদ্ভিজ্জ তেল, মাংস ও খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। 

আর গতকালই প্রথম আলোতে খবর বেরিয়েছে, ‘বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১১ বছরে সর্বোচ্চ, মানুষের কষ্ট আরও বাড়ল’। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন যে আর চলছে না, তার উদাহরণ আছে এই প্রতিবেদনে। শুধু যে নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তা–ই নয়। ঢাকার বাইরের মানুষও আছেন অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে। 

খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছেন, ‘সাপের খেলা যে জানে, সে ঠিকই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’ অজুহাত খোঁজা ছেড়ে মানুষকে বাঁচাতে এখন সেই সাপুড়েকে খুঁজে বের করুন। এই দায়িত্ব আপনাদের।