একটি উন্নয়ন প্রকল্প কোনো অঞ্চল বা সেখানকার সমৃদ্ধি বা আর্থসামাজিক উন্নতি ঘটায়। এটি হচ্ছে মোটাদাগে সত্য। এর পেছনে আরেকটি সত্য হচ্ছে, প্রকল্পটিকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট অনেকের পকেটও ভারী হয়। যার কারণে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেলে সেটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা থাকে না।
সেটি যদি থাকত, পাবনার একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট চালুর জন্য অন্তত ৩০০ বার ধরনা দেওয়া লাগত না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশাল প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিত্যক্ত হওয়ার মুখে। এরপরও ইনস্টিটিউটটির দিকে ফিরে তাকাতে ইচ্ছুক নয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কসংলগ্ন ডায়াবেটিক সমিতির জমজমাট হাসপাতালের পাশেই খাঁ খাঁ নার্সিং ইনস্টিটিউটটি দাঁড়িয়ে আছে। ডায়াবেটিক সমিতি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করা হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বৃদ্ধি করে, সেই সঙ্গে খরচও।
এ দেশের সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের এ তো চিরায়ত নিয়ম! এরপরও এক বছরের কাজ যে তিন বছরে শেষ করতে পেরেছেন, তাই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ দিতে হয়। এখন ২০১৯ সালে নির্মিত ভবনটি ডায়াবেটিক সমিতিকে বুঝিয়ে দিতেই যত বিপত্তি। ভবন নির্মাণে দায়িত্বে ছিল গণপূর্ত বিভাগ আর প্রকল্প পরিচালক জেলা সিভিল সার্জন। তখন পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশ কেলেঙ্কারি-কাণ্ডে বদলি করা হয় গণপূর্তের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ প্রকৌশলীকে। একই সঙ্গে নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রকল্পের পরিচালক ও সিভিল সার্জনও বদলি হন। এরপর কয়েক বছর চলে গেল।
মাঝখানে একটি মহামারিও পার করে দিলাম আমরা। নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকটের বিষয়টিও জোরেশোরে উচ্চারিত হলো তখন। এরপরও নার্সিং ইনস্টিটিউটটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেই। এটি চালু হলে এখান থেকে প্রতিবছর আবাসিক সুবিধাসহ ৫০ জন প্রশিক্ষিত নার্স পাওয়া যেত।
ডায়াবেটিক সমিতি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ভবনটি বুঝে পেতে গণপূর্ত বিভাগসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গত সাড়ে তিন বছরে অন্তত ৩০০ বার যোগাযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির জন্য নতুন কোনো পিডি নিয়োগ দেয়নি। ভবনটির বিষয়ে তারা এখন কিছু বলছেও না।
উল্টো ভবনের আসবাব কেনার জন্য যে ৪৯ লাখ টাকা ছিল, সেটাও ফেরত চেয়েছে। সরকারের টাকা ব্যবহার না হলে ফেরত যাবে, এটিই নিয়ম। কোন নিয়মে এত দিন ধরে নার্সিং ইনস্টিটিউটের ভবনটি ফলে রেখেছে তারা? কেন সেটি চালুর জন্য বছরের পর বছর ধরনা দিতে হবে? আমরা আশা করব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।