এক শ আট বছর আগে বেগম রোকেয়া মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল। তিনি যখন কলকাতায় এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন, তখন বাঙালি মুসলমান মেয়েদের বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না। শত বছর পর সেই চিত্র পুরো বদলে গেছে। এখন বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছেলে শিক্ষার্থীর চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। সেদিক থেকে বলা যায়, বেগম রোকেয়ার উদ্যোগ সার্থক হয়েছে।
হবিগঞ্জ শহরের মাহমুদাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শিরিন আক্তারও এলাকার শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। যেসব শিশু বিদ্যালয়ে যেতে অনাগ্রহী কিংবা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে, তাদের ফের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে তিনি নিজের বাড়িতেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মায়ের মমতা অবৈতনিক বিদ্যালয়’। ২০১৭ সালের শেষ দিকে এর যাত্রা শুরু হয়। শিরিন আক্তার মায়ের মমতা দিয়েই এই ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখান। কিন্তু এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো পয়সা নেন না। নিজে টিউশনি করে যে অর্থ পান, সেটাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় করেন।
যে দেশে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে না পড়িয়ে প্রাইভেট পড়াতে অধিক উৎসাহী, সে দেশে বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের পড়ানোর উদ্যোগটি শুধু ব্যতিক্রম নয়, মহৎও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিরিন আক্তার বলেন, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর বাড়ি ফিরে এসে দেখেন এলাকার অনেক ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। অর্থাৎ যেকোনো কারণেই হোক বিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে তারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেনি। আবার এদের ঘরে পড়াবেন, সেই সুযোগ অনেক অভিভাবকেরই নেই। এ অবস্থায় ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালু রাখতে শিরিন আক্তার নিজের বাড়িতে বিদ্যালয়টি চালু করেছেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। এতে অনেকে উৎসাহিত হয়। ফলে গুটিকয়েক ছেলেমেয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০। এর মধ্যে প্লে থেকে নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে ৪০টি শিশু। শিরিন আক্তারের একার পক্ষে এত ছেলেমেয়েকে পাঠদান সম্ভব নয় বলে তিন বন্ধুর সহায়তা নিচ্ছেন। তাঁরাও পাঠদানের বিনিময়ে কোনো সম্মানী নেন না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরকার আবুল কালাম আজাদ শিরিন আক্তারের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, বিদ্যালয়টিতে সহায়তা পাওয়ার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখবেন। আশা করি, শিক্ষা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। শিরিন আক্তারের উদ্যোগটি ব্যক্তিগত হলেও ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষার স্বার্থেই এটি করেছেন। এ ধরনের উদ্যোগে সরকারি, বেসরকারি কিংবা উভয় পর্যায়ে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যেসব বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তি আছেন, তাঁরাও এগিয়ে আসতে পারেন।