বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ দিন

'ভারপ্রাপ্তদের সাম্রাজ্য'

 ‘ভারপ্রাপ্তরাই ভরসা যেখানে’ শিরোনামে প্রথম আলোয় গতকাল শনিবার যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি দেখে ধারণা হতে পারে, কোনো সরকারি দপ্তরে এই অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। কেননা, আমাদের সরকারি দপ্তরগুলো চলে কর্তাব্যক্তিদের মর্জিমাফিক। যেখানে পদ নেই, সেখানে পদাধিকারী আছেন, আর যেখানে পদায়ন প্রয়োজন, সেখানে নিয়োগের বালাই নেই। জনপ্রশাসন জনগণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন গড়িমসি করে, তেমনি নিয়োগের বেলায়ও স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়ে আসছে। এটি জনগণের কাছে অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে।

কিন্তু প্রথম আলোর খবরটি কোনো সরকারি দপ্তরের নয়, দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদ চলছে অস্থায়ী বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে। এসব পদের মধ্যে আছে রেজিস্ট্রার, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব নিয়ন্ত্রক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে যখন প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তখন তার ফল ভোগ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।

আরও উদ্বেগজনক খবর হলো, রেজিস্ট্রার পদে ২৩ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদেও ১৯৯৪ সালের পর কেউ স্থায়ী নিয়োগ পাননি। চলছে অস্থায়ীভাবে। আর এসব অস্থায়ী নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য যা বলেছেন, তা নিজের অক্ষমতা ঢাকার ব্যর্থ প্রয়াস বলে মনে করি। উপাচার্যের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁকে নাকি খুব বেগ পেতে হচ্ছে। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই নিচ থেকে পদোন্নতি পেয়ে এসেছেন। নিচ থেকে আসা ব্যক্তিরা যদি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিতে না পারেন, কেন বাইরে থেকে যোগ্য ব্যক্তি আনছেন না? তাঁর প্রথম কর্তব্য ছিল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া। কিন্তু তিনি অনেক শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিই দেননি। আর যেসব পদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেসব পদের জন্য গঠিত নিয়োগ বোর্ডের বৈঠক ডাকা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে চরম অব্যবস্থা চলছে। যেসব শূন্য পদে অস্থায়ীভাবে শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের পাঠদান থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। উপাচার্য মহোদয় যতই ক্ষমতাধর হোন না কেন, তিনি এভাবে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করতে পারেন না।

এ ধরনের অস্থায়ী ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসন চালানোর কাজ যে শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, তা ভাবার কারণ নেই। অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও প্রায় অভিন্ন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন রেজিস্ট্রারসহ অনেক পদে স্থায়ীভাবে নিয়োজিত কেউ নেই। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য পদ থাকলেও ইচ্ছা করে তা পূরণ করা হয় না। উপাচার্য মহোদয়রা কোনোভাবেই ক্ষমতা খর্ব করতে চান না।  তাঁদের পছন্দসই ব্যক্তিরাই সাধারণত অস্থায়ী পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। কোনো কোনো উপাচার্য ডজনখানেক কিংবা তার চেয়েও বেশি কমিটির প্রধান পদ দখল করে আছেন। অতীতে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির বিরোধের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন অচল থাকার ঘটনাও ঘটেছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি সার্বক্ষণিক হলেও কোনো কোনো পদাধিকারী ‘খণ্ডকালীন’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকলে উপাচার্যের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু উপাচার্য দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাঁরও জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন।

যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন জড়িত, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলতে পারে না। অবিলম্বে শূন্য পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনে গতি আনুন। শিক্ষার্থীদের স্বস্তি দিন। এ ব্যাপারে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।