কোনো এলাকার মানুষ যদি চার মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় থাকে, তাদের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা সহজেই অনুমেয়। এ রকমই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ১০-১২ হাজার মানুষ। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। এর চেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে? বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সদর উপজেলার ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন, লাবসা ইউনিয়নের তালতলা ও পৌর এলাকার রাজারবাগান চার মাস ধরে জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকার ১০-১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের বাড়িঘর, উঠান ও চারপাশ পানিতে থই থই করছে। শৌচাগার বা অন্য কোথাও যেতে হলে তাদের এক থেকে দেড় ফুট পানি ঠেলে যেতে হচ্ছে। নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায়, বহমান নদী-খালে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে চার-পাঁচ হাজার একর জমিতে কোনো ধরনের ফসল চাষবাস করা যাচ্ছে না। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে সাতক্ষীরার নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ ও জেলা নাগরিক কমিটি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। বিষয়টি নিয়ে সভা ও সমাবেশ ছাড়াও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাসহ নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।
আমাদের দেশে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে পলি পড়ে নদী, খাল ও বিল ভরাট হয়ে যাওয়া। বৃষ্টির পানি নদী ও খালে-বিলে নিষ্কাশিত হতে না পারলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাই যথাসময়ে নদী ও খাল–বিল খনন করতে হবে। এ দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, পাউবো তাদের এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। নদী ও খালে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করার কারণেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নেট-পাটা দিয়ে যাতে কেউ মাছ চাষ করতে না পারে, তা দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। আর পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ঠিক করার দায়িত্ব পৌরসভার। বোঝাই যাচ্ছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় তিনটি কর্তৃপক্ষের কেউই ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। করলে চার মাস ধরে এসব এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে থাকত না। আসলে জবাবদিহির অভাবই এর পেছনের মূল কারণ। দায়িত্বে অবহেলার জন্য যদি তাদের জবাবদিহি করতে হতো বা কঠিন শাস্তি পেতে হতো, তাহলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
আমরা চাই সাতক্ষীরা সদর পৌরসভা, স্থানীয় পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন দ্রুত তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবে। তাহলেই দূর হবে সেখানকার জলাবদ্ধতার সমস্যা।