হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসলডুবির ঘটনা নতুন নয়। দু–তিন বছর পরপরই ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সর্বপ্লাবী বন্যা হাওরে ঢুকে পড়ে। কৃষককে পথে বসিয়ে ‘ধানের খনি’ জলের অতলে হারিয়ে যায়। এক ফসলি এলাকা হওয়ায় ফসলডুবির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখানকার মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়।

লক্ষণীয় হলো, যতবারই ফসলডুবি হয়, ততবারই এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, নির্মাণ ত্রুটি কিংবা সময়মতো বাঁধ সংস্কার না করা। দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে বদলি করা হয়। এই সাজাকে অনেক সময় সাজাপ্রাপ্তরা সাজা নয় বরং পুরস্কার হিসেবে উপভোগ করেন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফসলডুবির পর সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় বিশেষ তৎপরতা দেখিয়েছিল। সেই তৎপরতার অংশ হিসেবে নতুন নতুন জায়গায় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনাও হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কার কথা হলো, নির্ধারিত সময় কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে কমিটি করা হয়, অনেক জায়গায় সেই কমিটিই এখনো গঠিত হয়নি।

প্রথম আলোর খবরে দেখা যাচ্ছে, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নীতিমালা অনুযায়ী গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কথা ছিল। কাজ শুরুর কথা ছিল গত রোববার থেকে। কিন্তু সুনামগঞ্জের ধরমপাশা ও জগন্নাথপুরে এখনো পিআইসি গঠনের কাজই শেষ হয়নি। ফলে সময়মতো বাঁধের কাজ শেষ হবে না—এই আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে। আর কাজ যথাসময়ে শেষ না হলে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা করা যাবে না—এমন আশঙ্কায় ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন কৃষক।

জানা যাচ্ছে, সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলাধীন আটটি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে আছে। এই আট হাওরে সম্ভাব্য প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭টি। এর মধ্যে ১০৫টি প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০টি পিআইসি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজের জন্য সম্ভাব্য বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

নীতিমালা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে তা আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু এখনো একটির কাজও শুরু হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পিআইসি গঠন করে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা কমিটিতে নিজস্ব লোকজন ও সমর্থকদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য পিআইসি গঠনে দেরি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই অভিযোগ মানতে চাননি। চাওয়ার কথাও না।

কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ার পেছনে কে দায়ী আর কে দায়ী নয়, তা নিয়ে ঠেলাঠেলি করায় আর যা-ই হোক হাওরবাসীর কোনো উপকার হবে না। কাজটা দ্রুত শুরু করাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া দরকার। একই সঙ্গে বাঁধ নির্মাণে যাতে কোনো ধরনের ফাঁকি না থাকে, সে দিকটিও সর্বোচ্চ গুরুত্বের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।