হবিগঞ্জে চাঁদাবাজি

দেশের পরিবহন খাতে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে চাঁদাবাজি। ঢাকাসহ বড় জেলাগুলোর বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডগুলোতে এই অনাচার অনেকটাই প্রকাশ্য। কিন্তু জেলা–উপজেলা এবং পৌর এলাকাগুলোতেও অটোরিকশা ও ইজিবাইককেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় কিছু নেতার নাম আসছে। সাধারণত চাঁদা লেনদেন হয় কিছুটা আড়ালে–আবডালে। কিন্তু
ভাগ–বাঁটোয়ারায় সমস্যা হলেই তা প্রকাশ্য হয়। সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের অনেকে হালুয়া–রুটির এই ভাগাভাগিতে জড়িত, বাদ পড়ে না স্থানীয় পুলিশও।

দেশের প্রতিটি অটোরিকশা, ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার ভাগ পান স্থানীয় পুলিশ, রাজনৈতিক নেতাসহ অনেকেই। হবিগঞ্জেও একইভাবে চাঁদাবাজি চলছিল। কিন্তু দুই নেতার বিরোধে সেখানে অটোরিকশাচালকেরা রাস্তায় নেমে পড়েন। যাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, তাঁদের একজন স্থানীয় পৌর মেয়র, অন্যজন উপজেলা চেয়ারম্যান। এই দুজন আবার একে অপরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন।

স্থানীয় দুজন জনপ্রতিনিধি এভাবে অটোরিকশাস্ট্যান্ড দখলে জড়িয়ে পড়বেন, এটা কি তাঁদের দায়িত্ব–কর্তব্যের মধ্যে পড়ে? আর এই দখলবাজির অর্থ কী? চাঁদাবাজি তো ফৌজদারি অপরাধ; কিন্তু তাঁরা দুজনেই জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের কোনো উদ্যোগ নেই।

হবিগঞ্জ একটি দৃষ্টান্ত মাত্র, দেশের সব জেলায় ছোট–বড় পরিবহনে চাঁদাবাজির চিত্রটা কমবেশি একই রকম। খোদ ঢাকা শহরে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে। হবিগঞ্জে চাঁদাবাজির ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে একজন উপজেলা চেয়ারম্যান কীভাবে স্থানীয় অটোরিকশা সমিতির সভাপতি হন? আইনে হয়তো বাধা নেই, কিন্তু বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। তার চেয়েও বড় কথা অটোরিকশা সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি কী কাজটি করছেন।

ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে এভাবে মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদের অপব্যবহার করা উচিত নয়। জনপ্রতিনিত্বমূলক এসব পদের এভাবে মর্যাদাহানিও গ্রহণযোগ্য নয়। যাঁদের দায়িত্ব চাঁদাবাজি বন্ধের কাজে সহায়তা করা, তাঁরাই যদি এ ধরনের কাজে জড়ান, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে, কার কাছে প্রতিকার পাবে? রক্ষক ভক্ষক হলে তো আর মানুষের যাওয়ার জায়গা থাকে না। হবিগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। জনপ্রতিনিধি বা সরকারি দলের নেতা—কেউ কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন।