চাহিদা ও বরাদ্দের পাহাড়সম ব্যবধান কমান

সড়ক মেরামতে করুণ দশা

বাজেটে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতকে শক্তিশালী করার দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে পরিবহন খাতে বহুমুখী সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এমআরটি, বিমানবন্দর সম্প্রসারণের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতে বাজেটে অর্থসংস্থানের যে ব্যবস্থা, তা নিশ্চয় সন্তোষজনক। দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা–গোমতী সেতুর উদ্বোধনও হয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দুই কিলোমিটার ইতিমধ্যে দৃশ্যমান। কিন্তু এই উন্নয়নযজ্ঞের বিপরীতে যে দৃশ্যকল্প আমাদের বিস্মিত করেছে, সেটি হলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের সদ্য প্রকাশিত সমীক্ষা প্রতিবেদন। এটি বলেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি সড়কের দশা যখন রুগ্‌ণ বা আশু মেরামত উপযোগী, যখন এর সংস্কারে টাকা লাগবে ১০ হাজার কোটি টাকা, তখন চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ২৫ শতাংশ সড়কের অবস্থা খাস সরকারি সংস্থাটির মতেই মন্দ, খারাপ কিংবা খুব খারাপ। দেশের প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ‘ভালো’–এর কাতারে ফেলা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৫০ ভাগ। তার পরিষ্কার অর্থ হলো, সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে একটা দুরবস্থা চলছে। এর প্রতিকার নেই। এবং বিষয়টি দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোকে মানুষ ও পণ্য চলাচলের জন্য অনিরাপদ ও ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। 

মেগা প্রকল্প এবং তার বাজেট বরাদ্দের সঙ্গে বিদ্যমান সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের বরাদ্দে অবশ্যই সংগতি থাকতে হবে। কারণ, যাতায়াত ও পরিবহনগত উন্নয়নটিকে সামগ্রিকতায় দেখতে হবে। মেগা প্রকল্পগুলো থেকে মানুষকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া নিশ্চয় সরকারের লক্ষ্য। তাহলে সেই সরকারের নীতিনির্ধারকেরা কোনো বিচারেই দেশের ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ককে অত্যন্ত ঝুঁকিতে থাকার প্রতি উদাসীন থাকতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে এই বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যান নির্দেশ করছে। এটা সহজে বোধগম্য যে এমআরটি, বুলেট ট্রেন বা অত্যাধুনিক বিমান—এসবে চড়তে হলে সাধারণ মানুষকে কিন্তু ওই ১৭ হাজার কিলোমিটার পথ নিরাপদে পেরিয়ে আসতে হবে। অপ্রিয় হলেও সত্য, যানজটের ভয়াল গ্রাস ধীরে ধীরে দেশের প্রধান ও জনাকীর্ণ সড়ক-মহাসড়কগুলোকেও কাবু করছে। এর ওপরে ভগ্ন সড়ক মেরামত না হলে তার দশা দিন দিন আরও করুণ হবে। যানজট আরও অসহনীয় হবে। মানুষের কষ্ট আরও তীব্র হবে। সরকারকে তাই অবশ্যই তার যোগাযোগ অবকাঠামোগত বাজেট বরাদ্দ কৌশলে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। আর তা শুধু চলতি বছরেই নয়, এ বিষয়ে একটা দীর্ঘমেয়াদি, সমন্বিত এবং মেগা প্রকল্পে বরাদ্দের সঙ্গে আনুপাতিক হারে সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দের কৌশল বের করতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণকে অব্যাহতভাবে উপেক্ষা করা হলে মেগা প্রকল্পগুলো থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আহরণ করা যাবে না। 

সরকার বর্তমানে রাজধানী ও এর আশপাশের গণপরিবহন উন্নয়নে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (২০১৫-৩৫) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় মেরামতের জন্য উপযুক্ত তহবিলের জোগান দিতে হবে। খোদ রাজধানীতেও আমরা অহরহ খানাখন্দপূর্ণ সড়কের দেখা পাই। আমরা আশা করব, সওজের সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গত এক দশকে অন্তত ২৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে সড়ক। শুধু ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও অদক্ষ চালকেরাই নন, বেহাল সড়ক ও তার দায়িত্বহীন ব্যবস্থাপনাও এ জন্য কম দায়ী নয়।

সওজ বলেছে, তারা এর আগের সমীক্ষায় দেখেছিল, ৪ হাজার ৭৩১ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ বা খুব খারাপ। তার মানে ২০১৮-এর নভেম্বর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১২ শতাংশেরও কম সড়কের মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক।