২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে নজিরবিহীন আন্দোলনের পর ধারণা করা গিয়েছিল, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমবে। বাস্তবে সেটি হয়নি। করোনাকালে পরিবহন চলাচল কম থাকা সত্ত্বেও গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৮৯১ জন মারা গেছেন। গত বছর মারা গেছেন ৪ হাজার ১৩৮ জন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। সব খবর গণমাধ্যমে আসে না। মামলাও হয় না।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক মাসের মাথায় সরকার জাতীয় সংসদে নতুন আইন পাস করেছিল। কিন্তু এত দিন তা কার্যকর হতে পারেনি সড়ক পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরোধিতার কারণে। গত সেপ্টেম্বরে আইনটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার পরিপত্র জারি করে, যাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত, আহত ও সম্পদ ধ্বংসের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা আছে। ১৯৮৩ সালের সড়ক পরিবহন অধ্যাদেশে ক্ষতিপূরণের যে বিধান ছিল, তা-ও বাতিল হয়ে যায় নতুন আইন প্রণয়নের কারণে।
অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পেতে যে আইনি কাঠামো, বিধিমালা ও তহবিল দরকার, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আইনে বলা আছে, ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে হবে এবং ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যক্রম চালাতে হবে বিধিমালার ভিত্তিতে। অবশেষে ২২ ডিসেম্বর ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও সচিবই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিব থাকবেন। কিন্তু যে বিধিমালার ভিত্তিতে ট্রাস্টি বোর্ড কাজ করবে, তা তৈরি হয়নি এখনো। গত বছর ট্রাস্টি বোর্ডের বিধিমালার খসড়া পাঠানো হয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সেটিকে ‘অসম্পূর্ণ’ বলে ফেরত পাঠিয়েছে। এরপর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআরটিএ গত সেপ্টেম্বরে নতুন খসড়া পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের জন্য।
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিতে যে খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা আছে। খসড়ায় এ বিষয়ে একটি তহবিল গঠন করার কথাও আছে, যা আসবে পরিবহনমালিকদের কাছ থেকে। বাস ও ট্রাকপ্রতি মালিক বছরে ১ হাজার টাকা, প্রাইভেট কারের মালিক ৩০০ টাকা ও মোটরসাইকেলের মালিক ৫০০ টাকা তহবিলে জমা দেবেন বলেও খসড়া বিধিমালায় জানানো হয়।
বিধিমালা কবে চূড়ান্ত হবে? কবে তহবিল গঠন করা হবে? কবে ট্রাস্টি বোর্ড কাজ শুরু করতে পারবে? ইতিমধ্যে আইন প্রণয়নের দুই বছর পার হয়েছে। এসব চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারছেন না।
বর্তমানে কয়েকজন ভুক্তভোগী উচ্চ আদালতে রিট করে ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় পেলেও সেটি কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা টালবাহানা করছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত, আহত ও সম্পদ ধ্বংসের জন্য যাতে ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণ পান, সে জন্য অবিলম্বে বিধিমালা প্রণয়ন চূড়ান্ত করে ট্রাস্টি কাজ শুরু করুক, এটাই সবার প্রত্যাশা।