সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জবাবদিহি চাই

সড়কে মৃত্যু আর কত

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে পথে নেমে এসেছিল। এই অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা চোখ খুলে দিয়েছে।

তারপর এক মাস পেরিয়ে গেল, কিন্তু সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামল না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি অব্যাহত থেকেছে; আর ঈদুল আজহার আগে ও পরের দিনগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনা ও মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনা যেন বেড়েছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি নামে এক বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গত ১৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫৯ জন মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে ৯৬০ জন।

সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ও আহত হওয়ার বিষয়টি শুধু সংখ্যার বিচারে বিবেচনা করলেই চলে না। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য। আর যারা আহত হয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারায়, কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবারের বোঝায় পরিণত হয়, তাদের জীবনে যেন অন্ধকার নেমে আসে। প্রশ্ন হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার বিষয়টি যে একটা বড় জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে, তা কি সরকার উপলব্ধি করতে পারছে? সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনানুগ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়টি কি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? এমন তো নয় যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে এসব নিয়ে কথা বলছেন, সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে, সভা-সেমিনারও কম হচ্ছে না।

যেমন গত শুক্রবার রাজধানীতে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে, কী কী কারণে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে: ফিটনেসবিহীন যানবাহন অবাধে চলাচল করছে, অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন চালকেরা বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালাচ্ছেন, পণ্যবাহী যানবাহনেও বিপজ্জনকভাবে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। এই কারণগুলো দূর করা মোটেও অসম্ভব নয়। সে জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। না করলে জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো অপরাধ, এ জন্য জেল-জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু হাজার হাজার অদক্ষ চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই যানবাহন চালাচ্ছেন, এ জন্য কারও জেল-জরিমানা হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। বিচার ও শাস্তি হয় না বলে বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্ম্য কমছে না।

বুলগেরিয়ায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিরিখাতে পড়ে ১৭ যাত্রীর মৃত্যু হলে জনবিক্ষোভের চাপে দেশটির পরিবহনমন্ত্রীসহ তিন মন্ত্রীকে গত শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়। দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে অনুসরণ করা হলে, এ দেশের সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল এত দীর্ঘ হতো না।