এটিকে ব্যর্থতা ছাড়া কী বলা যায়

সড়কে এখনো পশুর বর্জ্য

ঈদের পরদিনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য শতভাগ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। তাঁদের এই দাবি আগের ওয়ার্ডগুলোর বেলায় কিছুটা সত্যি হলেও, নতুন ওয়ার্ডগুলোর বেলায় একেবারেই নয়। বাস্তবতা হলো, ঈদের পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলো থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়নি। এসব বর্জ্য বৃষ্টিতে সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোর যে কটি স্থানে পশুর অস্থায়ী হাট বসেছিল, সেখানেও বর্জ্য স্তূপ হয়ে রয়েছে। পুরোনো ওয়ার্ডগুলোর কিছু কিছু জায়গাতেও এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে। 

সংবাদমাধ্যম মারফত জানা যাচ্ছে, নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কোরবানির পশু জবাইয়ে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির কোনো ব্যবস্থাপনা ছিল না। এসব এলাকায় যে যাঁর মতো নিজের সুবিধাজনক স্থানে পশু কোরবানি দিয়েছেন। ফলে এখন বর্জ্য রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন তা পরিষ্কারও করছে না। দুই মেয়র আত্মপ্রশস্তি হিসেবে বর্জ্য সরানোর সাফল্য দাবি করলেও সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা এখন বলছেন, জনবল ও অর্থসংকটের কারণে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। অর্থ বরাদ্দ ও জনবল না থাকায় নতুন ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণে আপাতত তাঁদের কিছু করার নেই।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করে ডিএনসিসিতে যুক্ত করা হয়। আর শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভেঙে ডিএসসিসিতে যুক্ত করা হয়। 

দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নানা অব্যবস্থাপনার কারণে নতুন ওয়ার্ডে তাঁরা এখনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিতে পারেননি। এসব জায়গায় দুর্গন্ধে নাক-মুখ চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। বর্জ্য অপসারণে পর্যাপ্ত ট্রাক ও জনবল না পাওয়ায় কাজ এগোচ্ছে না। ৬১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুম্মন মিয়ার মতো অনেক কাউন্সিলর বলেছেন, তাঁদের ওয়ার্ডে কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। ফলে বর্জ্য কবে অপসারণ করা হবে, তা তাঁরা জানেন না। 

এমনিতেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপে ঢাকাবাসী আতঙ্কগ্রস্ত। কার্যকর ওষুধ না থাকার কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে বিপুল পরিমাণ পশুবর্জ্য এডিস মশার বংশবিস্তার বাড়াবে এবং তাতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিকে মোড় নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

কোরবানির সময় অগণিত পশু জবাই করা হবে এবং তার বর্জ্য দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে—এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকার কথা। দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। তাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দও আছে। কিন্তু এই অতি জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অর্থ নেই, লোকবল নেই—এমন বক্তব্য কাম্য হতে পারে না। কোরবানি আকস্মিক কোনো বিষয় বা ঘটনা নয়। সুনির্দিষ্ট দিনেই কোরবানি হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বহু আগেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অর্থ ছাড় করা যেত এবং লোকবল নিয়োগ করা যেত। সময়মতো তা করতে না পারাকে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। 

সংবাদ সম্মেলন করে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবি করা যেতেই পারে। কিন্তু নগরবাসী যখন বাস্তবতার সঙ্গে সেই দাবির কোনো মিল পান না এবং দুর্ভোগের মুখে পড়েন, তখন তাঁরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন। তাঁদের সেই ক্ষোভ ও হতাশা ‘অপসারণের’ দায় দুই সিটি করপোরেশনের। দ্রুত বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব।