কালীগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিন

স্লুইসগেট বিকলে গ্রাম প্লাবিত

দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায় এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার, ‘অভিযোগ তো পাওয়া যায়নি!’ অনেক সময় দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, অর্থাৎ দুর্ঘটনা ঘটার যাবতীয় উপসর্গ দৃশ্যমান হয় এবং সেই উপসর্গের কথা কর্তৃপক্ষের কানেও যায়। কিন্তু ব্যবস্থা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিপদ নেমে আসে। তারপরও সেই ‘বলে–কয়ে আসা’ বিপদের দায় কর্মকর্তারা নিতে চান না। বিশেষ করে কেউ যদি শুধু মৌখিকভাবে আসন্ন বিপদের কথা জানান এবং সেই অভিযোগ নথিবদ্ধ না হয়, তখন কর্মকর্তাদের পক্ষে ‘অভিযোগ পাওয়া যায় নাই’ বলা সহজতর হয়।

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে সুন্দরখালী স্লুইসগেটের কপাট নষ্ট হওয়া এবং নদীর পানি ঢুকে গরিব লোকজনের ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কর্মকর্তারা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তা উপরিউক্ত দায় এড়ানোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, উপজেলার বৈরাগীর চর গ্রামটিতে খাসজমিতে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করে গড়ে তোলা হয়েছে ভূমিহীন পল্লি। এখানকার বাসিন্দারা ছোট ছোট চিংড়িঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু তারালি ইউনিয়নের সুন্দরখালী স্লুইসগেটের কপাট ভেঙে তাঁদের ঘরবাড়ি ও ঘের ভেসে গেছে।

এই স্লুইসগেটের কপাট দেড় বছর আগে নষ্ট হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভাগ-১-এর বিভাগীয় প্রকৌশলীদের একাধিকবার জানিয়েছিলেন। এমনকি উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাতেও বিষয়টি তুলেছিলেন। তারপরও তা মেরামত করা হয়নি। ভূমিহীন পল্লির বাসিন্দারা অতিদরিদ্র পর্যায়ের। অনেকেই মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ঘের করেছিলেন। এখন তাঁরা সর্বস্বান্ত। এখন পাউবোর কোনো প্রকৌশলী বলছেন জলকপাটটি সংস্কার করার দায়িত্ব তাঁর নয়, কোনো প্রকৌশলী বলছেন বিষয়টি তাঁকে কেউ জানাননি।

কর্মকর্তারা ‘অভিযোগ হয় নাই’ বললে তা তথ্যের অভাবকে বোঝায় না। বোঝায় দায়বদ্ধতা, কর্তব্যবোধের অভাবকে। এলাকায় কী হচ্ছে তা জানাই তাঁদের কাজ। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলেই তাঁরা বাঁধা গৎটি বাজিয়ে দেন, ‘অভিযোগ তো হয় নাই’। যেন লিখিত অভিযোগ যদি না হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদেরও করণীয় আর কিছু নেই। নিজেদের কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন এবং তৎসম্পর্কিত অভাব-অভিযোগ বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা যে সরকারি কাজেরই অঙ্গ, তা তাঁরা ভুলে বসে আছেন। মনে হয় যেন তাঁদের উদ্দেশ্য সমস্যার মোকাবিলা নয়, তা উড়িয়ে দেওয়া।

আলোচ্য ক্ষেত্রে এটি পরিষ্কার, স্লুইসগেটের ভগ্নদশার কথা আগেই জানানো হয়েছিল কিন্তু কর্তারা গা করেননি। ফলে এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।