মাউশির নির্দেশনা যেন মেনে চলা হয়

স্কুলশিক্ষার্থীর টিউশন ফি

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি নেওয়া যাবে না বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) যে নির্দেশনা দিয়েছে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ রকম একটি নির্দেশনা অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল। কেননা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের বিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। অভিভাবকেরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টিউশন ফি অর্ধেক কমাতে হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, টিউশন ফি কমালে তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারবে না। এই উভয়সংকটে দেরিতে হলেও মাউশির নির্দেশনা সমস্যার সুরাহা করতে সহায়ক হবে আশা করি।

সরকার আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়িয়েছে। কিন্তু ছুটির কারণে তো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ থাকতে পারে না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে পাঠদান করে যাচ্ছে, যদিও সেই সুবিধা সব শিক্ষার্থীর পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ না নিয়েই বেতন দেবে? আবার শিক্ষার্থীরা ফি না দিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও বেতন-ভাতা পাবেন না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সমস্যা নেই। সেখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতনও সরকারি কোষাগারে জমা হয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেকাংশে শিক্ষার্থীদের ফির ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার দুই শ্রেণির—এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতনের সিংহভাগ সরকার দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে তাদেরও সমস্যা কম। কিন্তু নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক উভয়কে সমস্যার গভীরতা অনুধাবন করতে হবে। গত বুধবার মাউশির দেওয়া নির্দেশনা সমস্যার সমাধানসূত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। মাউশির নির্দেশনা অনুযায়ী, টিউশন ফি ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ফি নিতে পারবে না। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন ফি নেওয়া হয়, তার পরিমাণও কম নয়। আমরা মনে করি, মাউশির এ প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল, সেখানে এগুলো দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়তি ফি নিয়ে থাকে, তা ফেরত দিতে হবে বা পরবর্তী মাসের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে অসচ্ছল। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে অপারগ। করোনাকালে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নিজেদের আয় দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। মাউশি আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখার কথা বলেছে। আমরাও মনে করি, এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে টিউশন ফির কারণে কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও রক্ষা করতে হবে।

সংকট উত্তরণে সরকার আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঋণসহায়তা দিতে পারে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ছাড় দিলেও কোনো সমস্যায় না পড়ে। তবে নির্দেশনা দিয়েই মাউশির দায়িত্ব যেন শেষ হয়ে না যায়, তদারকিও জারি রাখতে হবে। এর আগেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়তি ভর্তি ফি নিয়েছিল। উচ্চ আদালত তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এবারও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা মাউশিকেই নিশ্চিত করতে হবে।