সোনার চর দ্বীপ

ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরও পটুয়াখালীর সোনার চর দ্বীপকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে না তোলায় সোনার চরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে যেমন পর্যটকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাওয়া থেকে।

পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে সোনার চর। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের মোহনায় বঙ্গোপসাগরে সোনার চর দ্বীপটির অবস্থান। সোনার চর পূর্ব-পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে আড়াই কিলোমিটার। মোট আয়তন ১০ বর্গকিলোমিটার। গোটা দ্বীপটি যেন সাজানো-গোছানো এক বনভূমি। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনার চরে শুধু নানান ধরনের বৃক্ষের সমাহারই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও। হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্য শুয়োর, বানর এ বনের বাসিন্দা। রয়েছে চার কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা। কিন্তু এই অজানাকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, সোনার চরকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১১ সালে সোনার চরকে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো–ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সোনার চরে পর্যটকদের ওঠানামার জন্য জেটি নির্মাণ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, হরিণ দেখার প্ল্যাটফর্ম, পিকনিক স্পট, হাঁটার পথ নির্মাণ, পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, বন্য প্রাণীর সুপেয় পানির জন্য পুকুর খনন, ছাউনি নির্মাণ, কাঠের সেতু, কর্মচারীদের ব্যারাক হাউস, বসার ব্যবস্থার জন্য বেঞ্চ ইত্যাদি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা করা হয়নি। সোনার চরে যাওয়ার সহজ কোনো যোগাযোগব্যবস্থাও নেই। ফলে পর্যটকেরা এখানে আসতে আগ্রহী হন না।

অবকাঠামো নির্মাণ, যাতায়াতব্যবস্থা সহজ করাসহ যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হলে সোনার চর দ্বীপ হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। সরকার এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারলে পরিকল্পিত কাঠামোর আওতায় বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এই খাত থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা খুব একটা এগিয়ে যেতে পারিনি। দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই সরকারকে এখন এ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। সোনার চর দ্বীপসহ আরও যেসব স্থান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব দিকে নজর দিতে হবে।