সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিন

সেন্টুশাইলের ব্যাপক ফলন

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত সেন্টুশাইল ধান চাষ করে কৃষকদের লাভের মুখ দেখার খবরটি উৎসাহব্যঞ্জক। এভাবে যদি স্থানীয়ভাবে আরও ধান উদ্ভাবন করা যায়, তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে—এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নালিতাবাড়ীর চাটকিয়া গ্রামের কৃষক সেন্টু হাজং উদ্ভাবিত ধান সেন্টুশাইল গত তিন মৌসুমে চাষ করে কৃষকেরা ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সাত বছরের একক প্রচেষ্টায় বিআর-১১ ধানের সঙ্গে স্থানীয় জাতের চিনিশাইল ধানের সংকরায়ণ ঘটিয়ে ২০১৬ সালে এই নতুন জাতের ধানের উদ্ভাবন করেন সেন্টু হাজং। বীজতলা তৈরি থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সেন্টুশাইল উৎপাদনে সময় লাগে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন। ধান চাষে তেমন কোনো পরিচর্যা লাগে না। পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। ফলনও পাওয়া যায় বেশ। প্রতি একরে ৪৫ থেকে ৫৫ মণ। স্থানীয় কৃষকেরা এখন এই ধান চাষের দিকে ঝুঁকছেন। নিরঞ্জন হাজং নামের স্থানীয় একজন কৃষক গত আমন মৌসুমে পাঁচ একর জমিতে সেন্টুশাইল ধানের চাষ করে ধান পেয়েছেন ২৫০ মণ। সেই ধান বাজারে বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তাঁর লাভ হয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার টাকা।

নতুন জাতের এ ধান কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে বলাই যায়। আমাদের দেশে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে সেন্টুশাইল ধান ভূমিকা রাখতে চলেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর একটি দেশ। ধান হচ্ছে এ দেশের প্রধান ফসল। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে চাষযোগ্য জমি কমছে। এ জন্য দরকার বেশি ফলন দেয় এমন জাতের ধানের চাষ। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, একই মাটি ও জলবায়ুতে বছরের পর বছর এক জাতের ধান চাষ করলে ফলন কমতে বাধ্য। উল্টো রোগ-পোকার আক্রমণ বাড়ে। তখন চাষিরা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন, যা মাটির স্বাস্থ্যের পক্ষে আরও ক্ষতিকর। এ সমস্যা সমাধানে জমিতে নতুন নতুন জাতের ধান রোপণ করা জরুরি। তাই সেন্টুশাইলসহ স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত ধান চাষের দিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সেন্টু হাজং সেন্টুশাইল ছাড়া আরও ১৮ ধরনের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। এ ছাড়া বরগুনার পাথরঘাটায় মীর আবদুল আজিজ নামে আরেকজন কৃষক বেশ কয়েকটি নতুন জাতের ধান উৎপাদন করেছেন, যেগুলোর ফলনও বেশ ভালো। আমরা মনে করি, স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত এসব ধান সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা খুবই জরুরি।