বৃষ্টিহীন শীতের শুষ্কতা আর রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া এখন দেশজুড়ে। ঝড়–বৃষ্টির মতো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। শাকসবজির মতো ফসলের জন্য এই আবহাওয়া অনুকূল। কিন্তু বোরো ফসলের জন্য খুব একটা নয়। কারণ, এই মৌসুমে সেচসংকট চরম আকার ধারণ করে। নির্বিচারে খাল ভরাট ও পুরোনো খালগুলো নতুন করে খনন না করার কারণে এই সময় সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান না কৃষকেরা। তাই অনেক জায়গায় এখন বোরো ফসল পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে, দেশের বহু এলাকায় বোরো ফসলে সেচের সংকট দেখা দিয়েছে। খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় অগভীর নলকূপেও পানি মিলছে না। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ বিভাগের পাম্পবিষয়ক যে কর্মসূচি থাকে, তা ঠিকমতো কাজ করছে না। অনেক এলাকায় তাদের বসানো পাম্প অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো আবাদ। কৃষকদের ভাষ্য, সরকার তাঁদের উপকারের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দিলেও বিএডিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে এর সুফল তাঁরা পাচ্ছেন না। বিএডিসির সেচ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তাঁরা এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বিএডিসির মাধ্যমে প্রতিবছর খাল খননের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ এলেও তাঁরা কাজ করছেন না। অনেক প্রকল্পের কাজ না করেই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ম্যানেজ করে বিল তুলে নেন ঠিকদারেরা।
সম্প্রতি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ও পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চেল্লাখালী নদীর ভাটিতে পানি না থাকায় ১ হাজার ২০০ একর সদ্য রোপণ করা বোরো ফসল সেচসংকটে পড়েছে। এ সংকট নিরসনে এলাকাবাসী উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে ৮০০ কৃষকের ১ হাজার ২০০ একর জমিতে রোপণ করা বোরো আবাদের খেত শুকিয়ে গেছে। এই অবস্থা দেশের বহু অঞ্চলে চলছে। এখন কথা হলো বোরো ফসল মার খেলে এর প্রতিক্রিয়া পড়বে সারা দেশে। কৃষককে যদি সেচের বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বহু কৃষক হতাশায় পড়ে বোরো আবাদ থেকে সরে আসবেন। এটি জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে।
এ বিষয়গুলো আমলে নেওয়া দরকার। ভূগর্ভস্থ পানি তুলে হোক বা নদীনালা থেকে এনে হোক, সেচসংকট দ্রুত সমাধান করতে হবে। বিএডিসির বিদ্যমান খাল খনন ও পাম্প প্রকল্পগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া সম্ভব।
বোরো ফসল ফলানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা সেচ—এ বিষয়কে মাথায় রেখে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া দরকার। এতে একটি টেকসই সেচব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে, যা দেশের কৃষিকেও একটি টেকসই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে।