সুন্দরবন সুরক্ষা শুধু কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় নয়, সুন্দরবন গোটা বাংলাদেশ, উপমহাদেশ তথা বিশ্বের পরিবেশের জন্য একটি রক্ষাকবচ। সুতরাং সংশ্লিষ্ট যাঁরা গত সোমবারের শপথ অনুষ্ঠানকে সফল করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা যেন আত্মতুষ্টিতে না ভোগেন। বরং আমরা মনে করি, প্রশাসনকে উল্লিখিত শপথ বাস্তবায়নে এখন থেকে আরও বেশি সজাগ ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে লক্ষণীয় হলো মাছ, মধু ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্যতম বড় বাধা হলো বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। অথচ গত সোমবারের সমাবেশে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ ছিল দায়সারা। সুতরাং এই শপথের সুফল পেতে হলে জেলা প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বন বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি আগের মতোই দায়মুক্তি ভোগ করে চলেন, তাহলে তো বিষয়টি ‘যথাপূর্বং তথপরং’ থাকার ঝুঁকি থাকবে।
এ ছাড়া সুন্দরবনের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী শুধু শ্যামনগরই নয়, আশাশুনি উপজেলায়ও রয়েছে। যদিও তারা সংখ্যায় কম। আমরা মনে করি, আশাশুনির সরকারি প্রশাসনের উচিত হবে, আশাশুনির লোকজনকে নিয়ে শিগগিরই আরেকটি সমাবেশের আয়োজন করা। তবে শ্যামনগর উপজেলার মানুষ সমাবেশে এসেছিলেন বলে তাঁদের আরও সংগঠিত ও পদ্ধতিগতভাবে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা ফুরায়নি। কারণ, এই উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। এদের একাংশ কাঠ ও মধু সংগ্রহের কাজও করে থাকেন। কিন্তু সমাবেশে হয়তো তাঁদের মধ্য থেকে দুই হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরার শপথ অনুষ্ঠানকে একটি অনুসরণীয় মডেল হিসেবে দেশের অবশিষ্ট অঞ্চলের মানুষের সামনে হাজির করতে হবে। কারণ, আমরা কয়েক দশক আগেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। এই রূঢ় বাস্তবতায় সুন্দরবনের মতো সম্পদকে রক্ষায় যে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেই ভাবনায় আমরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে খুব বেশি উদ্বিগ্ন দেখিনি। সুতরাং সুন্দরবন রক্ষায় অংশীজনদের সংগঠিত করা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।