সংস্কারকাজে ধীরগতি কাম্য নয়

সিলেটের সড়ক

সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজের ধীরগতির কারণে ওই সড়কে চলাচলকারী ও এলাকার লোকজনকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিলে কদমতলী এলাকার কিনব্রিজ থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করাসহ সংস্কারের কথা উল্লেখ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ১৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু দেড় বছর পার হয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত এক-তৃতীয়াংশ কাজও শেষ হয়নি। এক কিলোমিটার সড়কের মধ্যখানে বেশ কিছু জায়গায় সড়ক বিভাজক নির্মাণ ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। এই যদি হয় অবস্থা, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হবে না বলেই মনে হচ্ছে।

কাজের এই ধীরগতির কারণে ভাঙাচোরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। লোকজনকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে তাঁরা যেমন দোকানে সময়মতো মালপত্র আনতে পারছেন না, একইভাবে ক্রেতারাও দোকানে আসতে পারছেন না। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য হচ্ছে বর্ষা মৌসুম, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি কারণে সড়ক সংস্কারের কাজ ধীর হয়ে পড়েছে। তবে চলতি মৌসুমেই তারা সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করবে।

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কথার ওপর কতটুকু ভরসা করতে পারি? যে সড়কের সংস্কার দেড় বছরে এক–তৃতীয়াংশ হয়নি, তা আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে শেষ হওয়ার আশা আমরা কী করে করতে পারি?

আমাদের দেশে সড়ক–মহাসড়কে সংস্কারকাজ সময়মতো শেষ না হওয়া এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কখনো কোনো সড়কের সংস্কার বা উন্নয়নকাজ হতে দেখা যায় না। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। কখনো কখনো এই ব্যয় বৃদ্ধি দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়। আবার দেখা যায়, সড়কের সংস্কারকাজ শেষ না হতেই তা ভেঙেচুরে যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়ম এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী। আর এ ব্যাপারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা নেই বলে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। সরকারকে এখন এদিকে নজর দিতে হবে। সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই সিলেটের কদমতলী এলাকার সড়কসহ দেশের সব সড়কের সংস্কারকাজ সময়মতো শেষ হোক। দূর হোক জনগণের ভোগান্তি।