হেফাজতের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এর মধ্যে সরকারি সম্পদ যেমন আছে, তেমনি আছে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনের ভেতরে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ৫৫০টি চেয়ার, ২০ সেট সোফা, ২২টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ সবকিছু পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। শহরটিতে অন্তত ৫৮টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা হয়। এগুলোর মধ্যে ৩১টি সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এর বাইরে ১২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তিনটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, একটি মন্দির, তিনটি ব্যক্তিগত ও দলীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সাতটি বাড়ি। ২৬টিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন দিনে সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১৫। এ ছাড়া হাটহাজারীতে মারা গেছেন চারজন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হেফাজতের অনুসারীরা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মুফতি মোবারক উল্লাহ বলেছেন, তাঁরা হামলার নির্দেশনা দেননি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ঘটনার জেরে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা প্রথম দিন রাস্তায় নেমে আসেন। পরদিন স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের পেটান। এর জের ধরে হরতালের দিন সহিংসতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ২৬ মার্চ বিকেলে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, ২৮ মার্চ মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে শার্ট-প্যান্ট পরা কিছু তরুণ-যুবকও ছিলেন। জেলা পরিষদ কার্যালয় ও আনন্দময়ী কালীমন্দিরের সিসি ক্যামেরার দুটি ফুটেজে এসব দেখা গেছে। কেবল প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতির হিসাব দেওয়া কোনো দায়িত্বশীল সরকারের কাজ হতে পারে না। এই যে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হলো, ১৭ জন মানুষ মারা গেলেন, তার দায় কে নেবে? হেফাজতের রাজনৈতিক অবস্থান, তারা কী করতে পারে বা পারে না এবং তাদের শক্তি সম্পর্কে সরকারের অনবহিত থাকার কথা নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, হেফাজতের কর্মসূচি সম্পর্কে সরকার কেন আগে থেকে সজাগ ও সচেতন ছিল না। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি এ ব্যাপারে কোনো আগাম তথ্য দিতে পারেনি? বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অতীতেও হেফাজত সহিংসতায় জড়িয়েছে। তাদের ব্যাপারে সরকার এতটা নিশ্চিন্ত ছিল কীভাবে? ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তা তিন দিন ধরে চলেছে। সেখানকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর কি এসব ঠেকাতে এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় কিছুই করার ছিল না?
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের একধরনের সমঝোতার কথা বিভিন্ন মহলে আলোচিত। গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু কর্মসূচি পালনের নামে রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পদ ধ্বংস করার অধিকার কারও নেই।
আমরা আশা করব, হেফাজতের বিরুদ্ধে সম্পদ ধ্বংস ও সহিংসতার যে অভিযোগ এসেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অবস্থায় কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেওয়া যাবে না। একইভাবে হেফাজত স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কর্মীদের দিয়ে তাদের পিটুনি দেওয়ার যে গুরুতর অভিযোগ করেছে, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।